ঢাকা, শুক্রবার, অক্টোবর ৩, ২০২৫ | ১৮ আশ্বিন ১৪৩২
Logo
logo

অমৃতসরের বারাস গ্রামে নবীদের কবর আবিষ্কার, আধ্যাত্মিক রহস্যে ঘেরা এই স্থানে ভিড়ছে মানুষ


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ০৩ অক্টোবর, ২০২৫, ০২:১০ পিএম

অমৃতসরের বারাস গ্রামে নবীদের কবর আবিষ্কার, আধ্যাত্মিক রহস্যে ঘেরা এই স্থানে ভিড়ছে মানুষ

ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের অমৃতসরের ইতিহাস সমৃদ্ধ শহর সারহিন্দ, যার স্তরে স্তরে জড়িয়ে আছে ঐতিহ্য, সংস্কৃতি আর আধ্যাত্মিকতার ছাপ। এই শহরের কাছেই রয়েছে ছোট্ট গ্রাম বারাস—যা দেখতে সাধারণ হলেও এর অন্তরে লুকিয়ে আছে এক অজানা রহস্য।

এই গ্রামেই শায়িত আছেন বহু নবী-রাসুল ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই কবরগুলো মানুষের মধ্যে জাগিয়ে রেখেছে এক বিশেষ টান ও আধ্যাত্মিক প্রশান্তি।

বারাসে প্রবেশ করলে প্রথমেই চোখে পড়ে একটি দৃষ্টিনন্দন গেট, যার উপরে লেখা—‘কুবুরে আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম’। সরু মেঠোপথ বেয়ে টিলার উপরে উঠলে যেন মনে হয়, এক ভিন্ন জগতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।

চূড়ায় পৌঁছালে দেখা মেলে নয়টি লম্বা কবর। চারটি একসঙ্গে, পাশে দুটি পাশাপাশি, খানিকটা দূরে আরও দুটি এবং শেষে এক কোণে একাকী একটি কবর। বেশিরভাগ কবরই সাত গজ দীর্ঘ, যা ইঙ্গিত দেয়—এগুলো কোনো সাধারণ মানুষের নয়। পাশেই রয়েছে মাদ্রাসা, হিফজখানা এবং একটি সুন্দর মসজিদ। সর্বদা শিশুদের কণ্ঠে ভেসে আসে কোরআন তিলাওয়াতের সুমধুর ধ্বনি, যেন ইতিহাস এখনো জীবন্ত।

ইসলামী ঐতিহ্য অনুযায়ী, পৃথিবীতে ১ লাখ ২৪ হাজার বা ২ লাখ ২৪ হাজার নবী এসেছিলেন মানবজাতির দিশারী হয়ে। যদিও কোরআনে উল্লেখ আছে মাত্র ২৫ জনের নাম। আল্লাহ বলেন, ‘প্রতিটি জাতির জন্য রয়েছে পথপ্রদর্শক।’ (সুরা রাদ: ৭)

ইতিহাসবিদদের মতে, ভারতীয় উপমহাদেশও নবুয়তের আলো থেকে বঞ্চিত হয়নি। ধারণা করা হয়, নূহ (আ.)-এর যুগে কিছু নবী তাঁদের অনুসারীদের নিয়ে আল্লাহর নির্দেশে ভারতবর্ষে হিজরত করেছিলেন। এখানেই তাঁরা মানুষকে একত্ববাদ ও ন্যায়ের বাণী শোনান এবং ইন্তেকালের পর এখানেই সমাহিত হন।

কালের প্রবাহে এই কবরগুলো মানুষের স্মৃতি থেকে হারিয়ে যায়। পরে মুজাদ্দিদে আলফে সানি নামে পরিচিত শায়েখ আহমাদ সারহিন্দি (রহ.) কাশফের মাধ্যমে জানতে পারেন এখানে বহু নবী-রাসুল সমাহিত আছেন। তাঁর প্রচেষ্টায় ৯টি কবর চিহ্নিত করা হয়, যা আজও অক্ষত অবস্থায় আছে।

পরবর্তীতে হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী (রহ.) এবং দারুল উলুম দেওবন্দের শায়খুল হাদিস হজরত জাকারিয়া (রহ.)-এর মতো শীর্ষ আলেমরা এখানে জিয়ারত করেন। দারুল উলুম দেওবন্দের বর্তমান প্রধান মুফতি আল্লামা হাবিবুর রহমান খায়রাবাদিও এই কবরগুলোর সত্যতা স্বীকার করেছেন।

স্থানীয় প্রবীণদের মতে, এই স্থান আল্লাহর ইচ্ছাতেই সংরক্ষিত আছে। এখানে নেই বিদআত বা অপসংস্কৃতি, বরং বিরাজ করছে এক গভীর আধ্যাত্মিক প্রশান্তি।