এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ০৪ অক্টোবর, ২০২৫, ০২:১০ পিএম
আজাদ কাশ্মীরে চতুর্থদিনের ধর্মঘট, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে বহু নিহত, বিক্ষোভকারীদের ৩৮ দাবিতে অচল জীবন
পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীর এখন উত্তপ্ত। টানা চতুর্থ দিনের মতো গতকাল বৃহস্পতিবারও ধর্মঘট পালিত হয়েছে। এ সময় সহিংসতায় অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছেন বলে সরকারি হিসেবে জানানো হয়েছে। তবে বিক্ষোভকারীদের দাবি, এ সংখ্যা ১৫ জন, যার মধ্যে আছেন তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা। আহত হয়েছেন আরও অনেকেই।
কিভাবে শুরু হলো এই বিক্ষোভ
আজাদ কাশ্মীরে উত্তেজনার সূচনা গত ২৯ সেপ্টেম্বর। ওইদিন থেকেই লকডাউন কর্মসূচি শুরু করে জম্মু কাশ্মীর যৌথ আওয়ামী অ্যাকশন কমিটি (জেএএসি)—যা ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে। এর ফলে কয়েকটি জেলার কার্যক্রম সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, ২৮ সেপ্টেম্বর থেকেই আজাদ কাশ্মীরে ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ রয়েছে।
এই আন্দোলনের শেকড় ২০২৩ সালের মে মাসে। তখন স্থানীয়রা অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিলের প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। একই সময়ে ভর্তুকি দেওয়া গমের সরবরাহে ঘাটতি ও ময়দা চোরাচালানের অভিযোগ ওঠে। বিভিন্ন দাবি একত্র হয়ে ওই বছরের আগস্টে জেএএসি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০২৪ সালের মে মাসে আন্দোলন প্রথম বড় সংঘর্ষে রূপ নেয়, যখন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন নিহত হন।
তখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বিদ্যুতের শুল্ক কমানো এবং ময়দার দাম হ্রাসে সম্মত হলে আন্দোলন স্থগিত হয়। কিন্তু বেশিদিন শান্তি টেকেনি। চলতি বছরের আগস্টে আবারও লকডাউনের ডাক দেয় জেএএসি।
বিক্ষোভকারীদের দাবি
বিক্ষোভকারীরা এবার মোট ৩৮ দফা দাবি তুলেছে। এর মধ্যে রয়েছে—
বিনামূল্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা
অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প
প্রাদেশিক আইনসভার কাঠামো পরিবর্তন
সবচেয়ে আলোচিত দাবি হলো সরকারি কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত সুবিধা বাতিল। বর্তমানে কর্মকর্তাদের দুইটি সরকারি গাড়ি, ব্যক্তিগত সহকারী, দেহরক্ষী এবং সীমাহীন জ্বালানি সুবিধা দেওয়া হয়।
আরেকটি বড় দাবি হলো শরণার্থীদের জন্য বরাদ্দ ১২টি সংরক্ষিত আসন বাতিল করা। জেএএসি’র মতে, ১৯৪৭ সালের বিভাজনের পর আসা শরণার্থীরা এখন উন্নয়ন তহবিলের ওপর একচেটিয়া প্রভাব খাটাচ্ছে।
এ ছাড়া তারা পুরোনো মামলা প্রত্যাহার, করমুক্তি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং পাহাড়ি অঞ্চলকে পাকিস্তানের অন্যান্য অংশের সঙ্গে যুক্ত করতে টানেল ও সেতু নির্মাণের দাবি করেছে।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
অবস্থার নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। তবে আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। জেএএসি এ পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে।
পাকিস্তান সরকার বলছে, নিহতের সংখ্যা ৯ জন হলেও স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী তা ১৫। আজাদ কাশ্মীরের অর্থমন্ত্রী আব্দুল মাজিদ খান জানিয়েছেন, আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি মানার আশ্বাস দেওয়া হলেও, দুইটি ইস্যুতে স্থবিরতা রয়ে গেছে—
১. শরণার্থীদের জন্য আইনসভার আসন
২. সরকারি কর্মকর্তাদের বাড়তি সুবিধা
এরপর কী হতে পারে
গতকাল বৃহস্পতিবারের আলোচনায় কোনো সমাধান হয়নি। তবে আজ শুক্রবার ফের আলোচনায় বসার কথা রয়েছে। মন্ত্রী আব্দুল মাজিদ খান আশাবাদী যে আলোচনায় অগ্রগতি হলে দ্রুতই ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা চালু করা হবে।
তবে আপাতত আজাদ কাশ্মীরের পরিস্থিতি অস্থির, এবং উত্তেজনার সমাধান কত দ্রুত হবে তা এখনো অনিশ্চিত।