ঢাকা, রবিবার, অক্টোবর ৫, ২০২৫ | ২০ আশ্বিন ১৪৩২
Logo
logo

আমেরিকার ঘেরাওয়ে ভেনেজুয়েলা! চারদিক থেকে সেনা মোতায়েন, পাল্টা প্রস্তুতিতে মাদুরোর হুঁশিয়ারি


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ০৫ অক্টোবর, ২০২৫, ০১:১০ পিএম

আমেরিকার ঘেরাওয়ে ভেনেজুয়েলা! চারদিক থেকে সেনা মোতায়েন, পাল্টা প্রস্তুতিতে মাদুরোর হুঁশিয়ারি

ভেনেজুয়েলার উপকূলে মার্কিন সেনা ও সামরিক সরঞ্জামের ব্যাপক মোতায়েন ঘিরে লাতিন আমেরিকায় চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে, এটি নাকি “মাদক পাচার বিরোধী অভিযান” — কিন্তু সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এই মোতায়েনের আকার ও প্রকৃতি একটি পূর্ণাঙ্গ সামরিক আগ্রাসনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ইরানি গণমাধ্যম পার্স টুডে-এর খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন বাহিনীর এই অবস্থান ভেনেজুয়েলার গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ও বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেবে, যা ওয়াশিংটনকে দক্ষিণ আমেরিকায় স্থায়ী সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের পথ খুলে দিতে পারে।

এনবিসি নিউজও জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যে ভেনেজুয়েলার জলসীমায় হামলার নির্দেশ দিয়েছিল। এখন সেখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ, ১০টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, ২,২০০ সৈন্যসহ একটি মেরিন কর্পস ইউনিট, একটি সাবমেরিন এবং বিশেষ বাহিনী।

এদিকে, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো ঘোষণা দিয়েছেন, তার দেশ “যেকোনো আগ্রাসনের জবাব দিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।” তিনি বলেন, “আমরা স্বাধীনতার জন্য লড়েছি, প্রয়োজনে আবারও লড়ব।”

ইউরোপেও বাড়ছে যুদ্ধের আশঙ্কা

হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান সতর্ক করেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ধীরে ধীরে যুদ্ধের দিকে টেনে নেওয়া হচ্ছে। তার কার্যালয়ের মুখপাত্র জোল্টান কাভাচ সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, “যুদ্ধের হুমকি বাড়ছে। ইউক্রেন যদি ইইউতে যোগ দেয়, তাহলে ইউরোপ রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে।”

অরবান স্পষ্ট করে বলেন, “আমরা ইউক্রেনের জন্য মরতে চাই না।”

পুতিন-ট্রাম্প বৈঠকেও ফল মিলল না

গত ১৫ আগস্ট আলাস্কায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠকেও ইউক্রেন যুদ্ধের কোনো সমাধান হয়নি। মস্কো এখনো বলছে, কিয়েভের সঙ্গে শান্তি চুক্তির আগে পূর্ব ইউক্রেনের কিছু অঞ্চল হস্তান্তর করতে হবে।

ট্রাম্প বলেন, “রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিতে আমি প্রস্তুত, কিন্তু ন্যাটোর সব দেশকেও এতে অংশ নিতে হবে। কেউই রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনবে না।”

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, রাশিয়ার জ্বালানি স্থাপনায় ইউক্রেনের আক্রমণে মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য সহায়তা দিচ্ছে ওয়াশিংটন। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে টমাহক দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি বিবেচনা করছে, বলে নিশ্চিত করেছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স।

 রাশিয়া-বিরোধী অভিযোগ তুলল যুক্তরাজ্য

বর্ধমান এই ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই, ব্রিটিশ স্পেস কমান্ডের প্রধান জেনারেল পল টেডম্যান অভিযোগ করেছেন, রাশিয়া তাদের সামরিক উপগ্রহগুলোর সংকেত ব্যাহত করছে।

তিনি জানান, “রাশিয়ার কাছে এমন প্রযুক্তি রয়েছে যা আমাদের উপগ্রহ ট্র্যাক করে এবং তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করে।” বর্তমানে যুক্তরাজ্যের কক্ষপথে ছয়টি সামরিক উপগ্রহ সক্রিয়, যেগুলো জ্যাম-বিরোধী প্রযুক্তিতে সজ্জিত।

জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াসও সম্প্রতি জানিয়েছেন, রাশিয়া জার্মানির ব্যবহৃত দুটি ইন্টেলস্যাট উপগ্রহ ট্র্যাক করেছে। ফলে, জার্মানি ২০৩০ সালের মধ্যে ৩৫ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগে মহাকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার ঘোষণা দিয়েছে।

মার্কিন সামরিক উপস্থিতি, ইউরোপীয় যুদ্ধের আশঙ্কা, আর রাশিয়া-পশ্চিমা শক্তির মহাকাশ প্রতিযোগিতা — এই তিনটি বিষয় এখন বিশ্ব রাজনীতিকে ঘিরে এক অস্থির বাস্তবতা তৈরি করেছে।
ভেনেজুয়েলা বলছে, তারা “প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত।” কিন্তু বিশ্ব এখন একটাই প্রশ্ন করছে — নতুন শীতল যুদ্ধ কি শুরু হয়ে গেল?