ঢাকা, সোমবার, অক্টোবর ৬, ২০২৫ | ২১ আশ্বিন ১৪৩২
Logo
logo

দুর্গাপূজা ঘিরে ওড়িশার কটকে ভয়াবহ সংঘর্ষ, কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধে উত্তেজনা চরমে


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ০৬ অক্টোবর, ২০২৫, ০২:১০ পিএম

দুর্গাপূজা ঘিরে ওড়িশার কটকে ভয়াবহ সংঘর্ষ, কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধে উত্তেজনা চরমে

ভারতের ওড়িশা রাজ্যের ঐতিহাসিক শহর কটকে আবারও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে সংঘর্ষের জেরে প্রশাসন ৩৬ ঘণ্টার কারফিউ জারি করেছে এবং ইন্টারনেট সংযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ রেখেছে।

শান্তিপূর্ণ সম্প্রীতির শহর হিসেবে পরিচিত কটকে শনিবার গভীর রাতে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়। দরগাহ বাজার এলাকায় দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রার সময় উচ্চ শব্দের সংগীত বাজানো নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়, যা মুহূর্তেই সংঘর্ষে রূপ নেয়।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, রাত দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে একদল স্থানীয় বাসিন্দা গভীর রাতে জোরে গান বাজানোয় আপত্তি জানায় এবং শোভাযাত্রা থামিয়ে দেয়। এরপরই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে, ছাদ থেকে পাথর ও বোতল ছোড়ার ঘটনা ঘটে। শোভাযাত্রার অংশগ্রহণকারীরাও পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখায়।

এই সংঘর্ষে কটকের ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশ খিলাড়ি ঋষিকেশ দ্যানদেওসহ কয়েকজন আহত হন। গুরুতর আহত একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। ইতোমধ্যে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং সিসিটিভি ফুটেজ ও ড্রোন ভিডিও বিশ্লেষণ করে আরও অভিযুক্তদের খোঁজা হচ্ছে।

পুলিশ কমিশনার এস দেব দত্ত সিং জানান, “যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় সরাসরি জড়িত। ভিডিও ফুটেজের ভিত্তিতে আরও গ্রেপ্তার হবে।”

রাতের উত্তেজনা কাটতে না কাটতেই রবিবার সন্ধ্যায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মোটরসাইকেল র‍্যালি বের করে। র‍্যালিটি দরগাহ বাজার অতিক্রমের সময় দোকান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ ওঠে। পুলিশ হালকা বলপ্রয়োগ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও গুজব ছড়ানো ঠেকাতে ওড়িশা সরকার রবিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে সোমবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কটক পৌরসভা এলাকা, সিডিএ ও আশপাশের অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। এ সময়ে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রামসহ সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও বন্ধ থাকবে।

প্রশাসনের এক মুখপাত্র জানান, এই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য হলো ভুল তথ্য প্রচার ও ঘৃণামূলক কনটেন্ট ছড়িয়ে উত্তেজনা বাড়ানো রোধ করা।

ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাজি বলেন, “সহস্র বছরের ভ্রাতৃত্বের শহর কটকের শান্তি কিছু দুষ্কৃতীর কারণে বিঘ্নিত হয়েছে। দোষীদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।” তিনি আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসার নির্দেশ দেন।

অন্যদিকে, বিজেডি নেতা ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক বলেন, “কটকের মতো শহরে এমন সহিংসতা প্রশাসনের স্পষ্ট ব্যর্থতা। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ অক্ষম প্রমাণিত হয়েছে।”

প্রশাসনের এই ব্যর্থতার প্রতিবাদে সোমবার কটকে ১২ ঘণ্টার বন্‌ধের ডাক দিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)।