ঢাকা, সোমবার, অক্টোবর ৬, ২০২৫ | ২১ আশ্বিন ১৪৩২
Logo
logo

ট্রাম্পের নতুন ভিসা ফি নীতিতে চাপে আমেরিকা, ভারত চায় প্রতিভাবানদের ঘরে ফিরিয়ে আনতে


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ০৬ অক্টোবর, ২০২৫, ০২:১০ পিএম

ট্রাম্পের নতুন ভিসা ফি নীতিতে চাপে আমেরিকা, ভারত চায় প্রতিভাবানদের ঘরে ফিরিয়ে আনতে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তে এইচ-১বি ভিসার ফি ১ লাখ ডলারে উন্নীত করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে চাপে পড়েছে দক্ষ ভারতীয় পেশাজীবীরা— তবে ভারতের জন্য এটি হতে পারে এক “সুবর্ণ সুযোগ”। কারণ দিল্লির নীতিনির্ধারকরা এখন বিদেশে থাকা সেরা ভারতীয় মেধাবীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে চান।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ এক আমলা জানান, সরকার এখন বিদেশে থাকা ভারতীয়দের স্বদেশে ফিরে এসে জাতি গঠনে অবদান রাখতে উৎসাহিত করছে। মোদীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের এক সদস্য আরও বলেন, এইচ-১বি ভিসা বরাবরই আয়োজক দেশের (যুক্তরাষ্ট্রের) স্বার্থে কাজ করেছে, তাই ফি বৃদ্ধি ভারতের জন্য ইতিবাচক হতে পারে— এটি ভারতের জন্য প্রতিভা ফিরিয়ে আনার সুযোগ তৈরি করবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের এখন সময় এসেছে ‘রিভার্স ব্রেইন ড্রেন’ বা বিপরীত মেধা পাচার শুরু করার। প্রযুক্তি, চিকিৎসা এবং উদ্ভাবনী শিল্পে বিশ্বের সেরা ভারতীয় পেশাদারদের দেশে ফেরানোই এই পরিকল্পনার লক্ষ্য।

তবে চ্যালেঞ্জও কম নয়। অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে গড়ে তুলেছেন ক্যারিয়ার ও জীবন। যেমন নীতিন হাসান, যিনি ২০ বছর যুক্তরাষ্ট্রে থাকার পর সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। তিনি আগে মেটা (ফেসবুক)-তে এক মিলিয়ন ডলারের চাকরি করতেন। এখন তিনি বেঙ্গালুরুতে দুটি স্টার্টআপ চালাচ্ছেন, এর একটি প্ল্যাটফর্মের নাম B2I (Back to India)— যা প্রবাসী ভারতীয়দের দেশে ফেরার মানসিক ও পেশাগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাহায্য করে।

হাসান জানান, ট্রাম্পের নতুন নীতির পর থেকে দেশে ফেরার আগ্রহ তিনগুণ বেড়েছে। “শুধু গত ছয় মাসে ২০০-র বেশি অনাবাসী ভারতীয় B2I-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন দেশে ফেরার সুযোগ জানতে,” বলেন তিনি।

বিডিও এক্সিকিউটিভ সার্চের সিইও শিবানী দেশাই জানান, “আইভি লীগ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা ভারতীয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশে ফেরার আগ্রহ ৩০ শতাংশ বেড়েছে।” তিনি বলেন, অনিশ্চিত ভিসা নীতি অনেককেই দীর্ঘমেয়াদী ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে বাধ্য করছে।

এই প্রবণতার পেছনে আরও একটি বড় কারণ হলো ভারতের গ্লোবাল ক্যাপাবিলিটি সেন্টার (GCC)-এর দ্রুত বৃদ্ধি। বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানির এসব দূরবর্তী অফিস এখন দক্ষ ভারতীয় পেশাজীবীদের আকর্ষণ করছে।

তবে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের উপদেষ্টা ও বিশ্লেষক সঞ্জয় বারু মনে করেন, বিপরীত অভিবাসন ঘটাতে হলে সরকারের প্রয়োজন সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। “সরকারকে এখনই এগিয়ে এসে সেরা বিজ্ঞানী, উদ্যোক্তা ও পেশাদারদের টার্গেট করতে হবে। নেহেরুর সময় যেমন হয়েছিল, তেমন সাহসী নেতৃত্ব দরকার,” বলেন তিনি।

বারু আরও বলেন, “দেশে ফেরার অনুপ্রেরণা এখন হারিয়ে যাচ্ছে। যারা ফিরতে চান, তাদের জন্য সহজ করনীতি, স্টার্টআপ ভিসা এবং উন্নত অবকাঠামো জরুরি।”

ভারতের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সাল থেকে পাঁচ মিলিয়নেরও বেশি ভারতীয় নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন, আর অনেক কোটিপতি বিদেশে স্থায়ী হয়েছেন। এর বিপরীতে, জার্মানি ও অন্যান্য দেশ এখন ভারতীয় দক্ষ জনবলকে আকৃষ্ট করতে ‘গোল্ডেন ভিসা’ দিচ্ছে।

বারু বলেন, “যদি সরকার সত্যিই প্রবাসীদের ফিরিয়ে আনতে চায়, তবে শুধু আবেগ নয়, বাস্তব সুবিধা দিতে হবে— শিক্ষা, গবেষণা, কর ব্যবস্থা ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন। এটাই একমাত্র পথ ভারতের হারানো প্রতিভা পুনরুদ্ধারের।”