এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ০৬ অক্টোবর, ২০২৫, ০২:১০ পিএম
যে মেয়েকে ছোটবেলায় ক্রিকেট খেলতে বারণ করতেন বাবা, তাকে শাস্তি দিতেন বকাঝকা করে, আজ সেই মারুফা আক্তার দেশের জন্য সুনাম কুড়াচ্ছেন। মাত্র ২০ বছর বয়সী এই পেসারের হাত ধরে ২০২৫ নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ শুরু করেছে দারুণ। পাকিস্তানের বিপক্ষে ১১৩ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটে জয় অর্জন করেছে টাইগাররা।
উত্তরাঞ্চলের নীলফামারীর প্রত্যন্ত এলাকা থেকে উঠে আসা মারুফা এখন বিশ্বব্যাপী পরিচিত। মসৃণ রানআপ, দুর্দান্ত ইনসুইং এবং উইকেট থেকে মুভমেন্ট আদায় করার দক্ষতা মারুফাকে আলাদা করে তুলেছে। কলম্বোতে পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপ ম্যাচে ম্যাচ-সেরার খেতাবও জিতেছেন। ৭ ওভারে তিনি নিয়েছেন ৩১ রান খরচ করে ২ উইকেট, যা দুটিই এসেছে ইনিংসের প্রথম ওভারে।
মারুফার প্রতিবেশী নাজমুল ইসলাম বলেন, “মারুফা ছোট থেকেই ক্রিকেট খেলতে ভালোবাসত। ছেলেদের মতো পোশাক পরত। এজন্য গ্রামের মানুষ কত কটূকথা বলত তা তার বাবা-মা ভালোভাবেই জানতেন। আজ পুরো গ্রাম তার উপর গর্ব করছে।”
মারুফার জন্ম নীলফামারী সদর উপজেলার সংগলশী ইউনিয়নের ঢেলাপীর এলাকায়। বাবা আইমুল্লাহ হক, বর্গাচাষি এবং মা মর্জিনা বেগম, গৃহিণী। চার ভাই-বোনের মধ্যে বড় ভাই আল-আমিন নীলফামারী সরকারি কলেজে অনার্স করছেন। মেজো ভাই আহসান হাবিব দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। বড় বোন মাহফুজা আক্তারের বিয়ে হয়ে গেছে। ঘরের ভিটেটুকু তার নানার দেওয়া।
ছোটবেলা থেকেই মারুফা ছিলেন সাহসী ও কর্মঠ। সকালে বাবা সঙ্গে কৃষিকাজে সাহায্য, স্কুলের পর রেললাইনের ধারে ক্রিকেট অনুশীলন, সন্ধ্যা পর্যন্ত খেলা। দুই ভাইয়ের তুলনায় মারুফা ভালো খেলতেন। বড় ভাই আল-আমিন প্রাইভেট পড়ানোর বেতন দিয়ে বোনের ব্যাট, বল ও অন্যান্য সরঞ্জাম কিনে আনতেন।
২০১৮ সালে প্রতিভা অন্বেষণ ক্যাম্পের মাধ্যমে বিকেএসপির নজরে আসেন মারুফা। ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের পর ১৮ বছর বয়সেই জাতীয় দলে ডাক পান।
মারুফার বাবা আইমুল্লাহ হক বলেন, “গ্রামের মানুষ এখন আমাকে ‘মারুফার বাবা’ বলেই ডাকে। প্রথমে মেয়েকে ক্রিকেট খেলতে বারণ করতাম, আজ তার জন্য সবাই শ্রদ্ধা জানাচ্ছে।”
মারুফার মা মর্জিনা বেগম বলেন, “ছোট থেকে মেয়েটা খেলাধুলায় আগ্রহী ছিল। বকাঝকা করতাম, তবুও সে পড়ত ক্রিকেট নিয়ে। আজ তার সাফল্যে পুরো দেশ গর্ব করছে। মা হিসেবে আর কিছু চাই না।”
নীলফামারী জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান জানিয়েছেন, “মারুফা খুব ভালো ক্রিকেটার। তার হাত ধরেই ২০২৫ নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ জয় পাবে।”