এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ০৭ অক্টোবর, ২০২৫, ০৩:১০ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল সরকারের শাটডাউন সংকট আরও গভীর হচ্ছে। সরকারি ব্যয় মঞ্জুরি বিল পাসে টানা পঞ্চমবারের মতো ব্যর্থ হয়েছেন মার্কিন সিনেটররা। এতে দেশটির সরকারি কার্যক্রম অচলাবস্থা থেকে বের হতে পারবে কি না, তা এখন পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
সোমবার (৬ অক্টোবর) সিনেটে অনুষ্ঠিত ভোটে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলের পৃথক প্রস্তাবই প্রয়োজনীয় ৬০ ভোটের সীমা পায়নি। ফলে সরকারি তহবিল পুনরায় চালুর সম্ভাবনা আরও দূরে সরে গেছে।
মূল দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দু স্বাস্থ্যসেবা ইস্যু।
ডেমোক্র্যাটরা চান—নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য স্বাস্থ্যবিমার ভর্তুকি অব্যাহত রাখতে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের মেডিকেড প্রোগ্রামের কাটছাঁট প্রত্যাহার করতে।
অন্যদিকে রিপাবলিকানদের দাবি, ডেমোক্র্যাটরা অবৈধ অভিবাসীদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে গিয়ে সরকারকে শাটডাউনের মুখে ফেলেছে।
রবিবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছিলেন—যদি আবারও ভোট ব্যর্থ হয়, তবে ফেডারেল কর্মীদের ছাঁটাই শুরু হবে। ইতিমধ্যেই সরকারি তহবিল ফুরিয়ে যাওয়ায় হাজারো সরকারি কর্মী বেতন ছাড়া কাজ করছেন অথবা বাধ্যতামূলক ছুটিতে আছেন।
তবে ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, তিনি ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে সমঝোতার পথে যেতে প্রস্তুত। কিন্তু সোমবারের ভোটে কোনো পক্ষই জয় পায়নি—
ডেমোক্র্যাটদের প্রস্তাব ৪৫–৫০ ভোটে এবং রিপাবলিকানদের প্রস্তাব ৫২–৪২ ভোটে প্রত্যাখ্যাত হয়।
ভোটের পর ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমি ডেমোক্র্যাটদের ব্যর্থ স্বাস্থ্যনীতি নিয়ে কাজ করতে প্রস্তুত, কিন্তু আগে তারা সরকার চালু করুক।”
অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটরা তাদের অবস্থানে অনড়। তাদের দাবি—রিপাবলিকানদের প্রস্তাব নিম্ন আয়ের মানুষদের চিকিৎসা সুবিধা কমিয়ে দেবে। তারা চান নতুন বাজেটে স্বাস্থ্যবিমা ভর্তুকি বজায় রাখা হোক।
রিপাবলিকানরা পাল্টা অভিযোগ করেছেন, ডেমোক্র্যাটরা আসলে অবৈধ অভিবাসীদের চিকিৎসা সুবিধা দেওয়ার জন্য সরকারকে অচল করে রেখেছে। তবে ডেমোক্র্যাটরা এমন অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছেন।
সোমবার ওভাল অফিসে দেওয়া এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, “ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে, যা খুব ভালো ফল আনতে পারে। আমি স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ইতিবাচক কিছু আশা করছি।”
কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সিনেটের ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার এক্স (Twitter)-এ পোস্ট করে জানান, “এটা একেবারেই সত্য নয়।”
হোয়াইট হাউজ সতর্ক করেছে—শাটডাউন দীর্ঘায়িত হলে স্থায়ীভাবে কর্মী ছাঁটাই শুরু হতে পারে। প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, “আমরা চাই না কেউ চাকরি হারাক, কিন্তু সরকার বন্ধ থাকলে তা অনিবার্য।”
রবিবার এনবিসির Meet the Press অনুষ্ঠানে প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট নেতা হাকিম জেফ্রিস এবং রিপাবলিকান স্পিকার মাইক জনসন একে অপরের দলকে দোষারোপ করেন।
জেফ্রিস অভিযোগ করেন, “রিপাবলিকানরা ডেমোক্র্যাটদের উদ্দেশ্য বিকৃত করছে।”
অন্যদিকে জনসন পাল্টা বলেন, “ডেমোক্র্যাটদের দাবি বাস্তবসম্মত নয়, তারা শুধু রাজনৈতিক নাটক করছে।”
এখন পুরো আমেরিকা জুড়ে প্রশ্ন একটাই—এই অচলাবস্থা কবে শেষ হবে, আর কত কর্মী চাকরি হারাবেন?