ঢাকা, মঙ্গলবার, অক্টোবর ৭, ২০২৫ | ২২ আশ্বিন ১৪৩২
Logo
logo

ইতালির পথে রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ! সমুদ্রপথে সবচেয়ে বেশি অভিবাসী এবার আমাদের দেশ থেকেই


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ০৭ অক্টোবর, ২০২৫, ০৩:১০ পিএম

ইতালির পথে রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ! সমুদ্রপথে সবচেয়ে বেশি অভিবাসী এবার আমাদের দেশ থেকেই

ইউরোপে নতুন জীবন খুঁজতে ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্রযাত্রা— আর এই পথে সবচেয়ে বেশি মানুষের দেশ এখন বাংলাদেশ। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে সমুদ্রপথে ইতালিতে পৌঁছানো অভিবাসীদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন বাংলাদেশিরা।

ইতালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে মোট ১৫ হাজার ৪৭৬ জন বাংলাদেশি সমুদ্রপথে ইতালির উপকূলে পৌঁছেছেন। দেশভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরে ইতালিতে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আসা মোট অভিবাসীদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশই বাংলাদেশি — যা অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় সর্বোচ্চ।

সরকারি তথ্যে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের তুলনায় এবার বাংলাদেশিদের আগমন প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। গত বছরের প্রথম নয় মাসে যেখানে ৮ হাজার ৫২৬ জন বাংলাদেশি ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়েছিলেন, সেখানে এ বছর সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৪৭৬-এ।

তবে সামগ্রিকভাবে ২০২৫ সালে ইতালিতে পৌঁছানো অভিবাসীর সংখ্যা আগের দুই বছরের তুলনায় ওঠানামা করেছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে মোট ৫১ হাজার ৮৫৫ জন অভিবাসী ইতালিতে পৌঁছেছেন। ২০২৪ সালের একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল ৫১ হাজার ৩৪১, আর ২০২৩ সালে ছিল এক লাখ ৩৫ হাজার ৩১৯ জন— অর্থাৎ দুই বছর আগের তুলনায় এখনো সংখ্যা অনেক কম।

বাংলাদেশিদের পরেই ইরিত্রিয়া ও মিশর

বাংলাদেশিদের পর ইতালিতে সবচেয়ে বেশি অভিবাসী এসেছেন আফ্রিকার ইরিত্রিয়া ও মিশর থেকে। এদের সংখ্যা যথাক্রমে ৭ হাজার ৯০ জন ও ৬ হাজার ৫৫৮ জন।
এ ছাড়া পাকিস্তান, সুদান, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া ও টিউনিশিয়া থেকেও কয়েক হাজার মানুষ এ সময় ইতালির পথে পাড়ি জমিয়েছেন। অন্যান্য দেশের মধ্যে রয়েছে ইরান, সিরিয়া, গিনি, আলজেরিয়া, নাইজেরিয়া, মালি ও আফগানিস্তান।

অভিবাসনের মৌসুম ও শিশুর সংখ্যা বৃদ্ধি

পরিসংখ্যান বলছে, মে থেকে সেপ্টেম্বর সময়টিই ছিল এই বছরের অভিবাসনের প্রধান মৌসুম। মে মাসে ইতালিতে পৌঁছেছেন ৭ হাজার ১৭৮ জন, জুনে ৭ হাজার ৮৯ জন, জুলাইয়ে ৬ হাজার ৪৮৭ জন, আগস্টে ৬ হাজার ১৪৬ জন এবং সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৩১৫ জন। অক্টোবরের শুরু থেকে আগমন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে, অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিবাসীর সংখ্যাও বেড়েছে। ২০২৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইতালিতে পৌঁছেছে ৯ হাজার ১৫৬ জন শিশু— যা ২০২৪ সালের (৮ হাজার ৭৫২) তুলনায় কিছুটা বেশি, তবে ২০২৩ সালের (১৮ হাজার ৮২০) তুলনায় অনেক কম।

কঠোর সীমান্ত, তবু থামছে না বাংলাদেশিদের যাত্রা

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপীয় সীমান্তে নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ আরও কড়া হলেও বাংলাদেশিদের আগমনের ক্ষেত্রে তেমন প্রভাব পড়েনি। বরং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ এখন অন্যতম প্রধান উৎসদেশে পরিণত হয়েছে।
অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, কাজের সুযোগের অভাব ও উন্নত জীবনের স্বপ্ন— এই তিন কারণই হয়তো এখনো হাজারো তরুণকে ভূমধ্যসাগরের অনিশ্চিত যাত্রায় ঠেলে দিচ্ছে।