ঢাকা, বুধবার, অক্টোবর ৮, ২০২৫ | ২৩ আশ্বিন ১৪৩২
Logo
logo

চীনা হুমকি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র তৈরি করছে নতুন প্রজন্মের যুদ্ধবিমান


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ০৮ অক্টোবর, ২০২৫, ০৩:১০ পিএম

চীনা হুমকি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র তৈরি করছে নতুন প্রজন্মের যুদ্ধবিমান

চীনের বাড়তি সামরিক প্রভাব ঠেকাতে নতুন প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ধবিমান তৈরি করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দীর্ঘদিনের প্রস্তুতির পর, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই পেন্টাগন জানাবে—কে বানাবে মার্কিন নৌবাহিনীর পরবর্তী যুদ্ধবিমান।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ঘোষণাটি কয়েক বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পের অংশ, যা যুক্তরাষ্ট্রের আকাশ প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। এক মার্কিন কর্মকর্তা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সঙ্গে জড়িত দুই সূত্র জানায়, এটি হবে যুক্তরাষ্ট্রের চীনের বিরুদ্ধে প্রযুক্তিগত শক্তি বাড়ানোর অন্যতম বড় পদক্ষেপ।

এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে দুটি জায়ান্ট প্রতিরক্ষা কোম্পানি—বোয়িং ও নর্থরপ গ্রুম্যান করপোরেশন। এদের মধ্যে একজন তৈরি করবে নতুন যুদ্ধবিমান “এফ/এ-এক্সএক্স”, যা ১৯৯০-এর দশক থেকে ব্যবহৃত “এফ/এ-১৮ ই/এফ সুপার হর্নেট”-এর জায়গা নেবে।

সূত্র জানায়, প্রতিরক্ষাসচিব পিট হেগসেথ গত শুক্রবার প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই সপ্তাহেই বিজয়ী কোম্পানির নাম ঘোষণা করা হবে। তবে শেষ মুহূর্তে প্রশাসনিক জটিলতা বা কৌশলগত বিতর্ক প্রকল্পে সাময়িক বিলম্ব ঘটাতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কৌশলগত পরীক্ষা

এফ/এ-এক্সএক্স প্রকল্পে বিলম্ব হলে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর আকাশযুদ্ধ সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, যদি সময়মতো এই প্রকল্প এগোয় না, তাহলে ২০৩০ সালের পর মার্কিন নৌবাহিনী আধুনিক যুদ্ধবিমানের ঘাটতিতে পড়বে—যা চীনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির সামনে বড় দুর্বলতা হিসেবে দেখা দেবে।

এই নতুন বিমানে থাকবে সর্বাধুনিক স্টেলথ প্রযুক্তি, দীর্ঘ পরিসর ও স্থায়িত্ব, স্বয়ংক্রিয় বা বিনা চালকে পরিচালনার ক্ষমতা, এবং নৌবাহিনীর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে পূর্ণ সমন্বয়ের সক্ষমতা।

বাজেট ও রাজনীতির টানাপোড়েন

বসন্ত ও গ্রীষ্মে কংগ্রেস ও পেন্টাগনের মধ্যে অর্থায়ন নিয়ে টানাপোড়েনের কারণে প্রকল্পটি কিছু সময় স্থবির হয়ে যায়। পেন্টাগন প্রথমে ৭৪ মিলিয়ন ডলার উন্নয়ন তহবিল হিসেবে চেয়েছিল। কিছু কর্মকর্তা প্রকৌশল ঘাটতি ও সরবরাহ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কথা তুলে প্রকল্পটি তিন বছর পিছিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন।

তবে কংগ্রেস ও নৌবাহিনী দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে ছিল। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস ৭৫০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেয় প্রকল্পটি ত্বরান্বিত করতে—যা এ বছর গ্রীষ্মে পাশ হওয়া কর ও ব্যয় আইন-এর অংশ। পাশাপাশি ২০২৬ অর্থবছরের জন্য আরও ১.৪ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কার হাতে যাবে চুক্তি?

বোয়িং ও নর্থরপ গ্রুম্যানের যোগ্যতা নিয়ে ভেতরে ভেতরে চলছে বিতর্ক। বোয়িং সম্প্রতি মার্কিন বিমানবাহিনীর আরেকটি বড় প্রকল্প—এফ-৪৭ জেট—পাওয়ায় প্রকৌশল সম্পদের ঘাটতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে নর্থরপ গ্রুম্যানের সেন্টিনেল আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্প ব্যয়বহুল হয়ে পড়ায় তাদেরও নিয়ে সংশয় রয়েছে।

এফ/এ-এক্সএক্স প্রকল্পের মোট সংখ্যা, খরচ ও সময়সীমা এখনো গোপন রাখা হয়েছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি এফ-৩৫ প্রোগ্রাম-এর মতোই বহু বিলিয়ন ডলারের একটি সুপার-প্রকল্প হবে।

পরবর্তী ধাপের পরিকল্পনা

বর্তমানে মার্কিন নৌবাহিনী লকহিড মার্টিন-এর তৈরি এফ-৩৫সি জেট কেনার পরিকল্পনা করছে, যার সংখ্যা ২৭০টিরও বেশি। তবে লকহিড মার্টিনকে এই প্রতিযোগিতা থেকে ইতিমধ্যে বাদ দেওয়া হয়েছে।

নতুন প্রজন্মের এফ/এ-এক্সএক্স যুদ্ধবিমানগুলো ২০৩০ সালের পর পরিষেবায় যুক্ত হবে, আর বর্তমান এফ/এ-১৮ সুপার হর্নেট বহর ২০৪০-এর দশক পর্যন্ত কার্যকর থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এফ/এ-এক্সএক্স প্রকল্প শুধু যুক্তরাষ্ট্রের আকাশ প্রতিরক্ষা নয়, বরং চীনের সামরিক উত্থানের বিরুদ্ধে এক প্রতীকী জবাব হিসেবেও কাজ করবে।