ঢাকা, শুক্রবার, অক্টোবর ১০, ২০২৫ | ২৫ আশ্বিন ১৪৩২
Logo
logo

ভারতে তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঐতিহাসিক সফর, নজর রাখছে পাকিস্তান ও বিশ্ব শক্তিগুলো


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ১০ অক্টোবর, ২০২৫, ০২:১০ পিএম

ভারতে তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঐতিহাসিক সফর, নজর রাখছে পাকিস্তান ও বিশ্ব শক্তিগুলো

ভারতে পা রেখেছেন আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি বিশেষ কমিটি সাময়িকভাবে তার ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পরই এই সফর সম্ভব হয়েছে।

২০২১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর প্রত্যাহার এবং কাবুল পতনের পর তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় ফেরে। তারপর থেকে এবারই প্রথম কোনো শীর্ষ তালেবান নেতা দিল্লি সফরে এলেন, যা দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক অঙ্গনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।

বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া এই সফর নিয়ে তীব্র আগ্রহ দেখা দিয়েছে ভারত-পাকিস্তানসহ গোটা অঞ্চলে। কারণ নয়াদিল্লি ধীরে ধীরে তালেবান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করছে, আর পাকিস্তান সেই প্রক্রিয়া ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “আমরা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনার অপেক্ষায় আছি।” তিনি আমির খান মুত্তাকিকে “উষ্ণ স্বাগত” জানান।

এর আগে জানুয়ারিতে দুবাইয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন মুত্তাকি। এবার তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্করের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।

যদিও কোনো পক্ষই আনুষ্ঠানিক এজেন্ডা প্রকাশ করেনি, তবে কূটনৈতিক সূত্র বলছে, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা। উল্লেখযোগ্যভাবে, ভারত এখনও তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি।

মস্কোর পর দিল্লি সফর, স্বীকৃতি পেতে মরিয়া তালেবান

এই সফরকে তালেবানের আঞ্চলিক সম্পর্ক জোরদার ও ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। মস্কো সফরের পরই মুত্তাকি ভারতে এসেছেন — রাশিয়াই এখন পর্যন্ত একমাত্র দেশ, যারা তালেবান প্রশাসনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

ভারত দীর্ঘদিন ধরে আফগান নাগরিকদের আশ্রয় দিয়ে আসছে। তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর হাজার হাজার আফগান দেশটি ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। যদিও ২০২৩ সালে নয়াদিল্লিতে আফগান দূতাবাস বন্ধ হয়ে গেছে, তবুও মুম্বাই ও হায়দরাবাদের কনস্যুলেটগুলো সীমিত পরিসরে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ভারত জানিয়েছে, তাদের কাবুল মিশন বর্তমানে কেবল মানবিক সহায়তা সমন্বয়ের কাজেই সীমাবদ্ধ।

আঞ্চলিক ঐক্যের বার্তা

ভারতে আসার আগে মুত্তাকি রাশিয়ার মস্কোতে একটি আঞ্চলিক বৈঠকে অংশ নেন, যেখানে ভারত, পাকিস্তান, ইরান, চীন এবং মধ্য এশিয়ার কয়েকটি দেশ যৌথভাবে ঘোষণা দেয় যে, তারা এই অঞ্চলে বিদেশি সামরিক ঘাঁটি বা অবকাঠামো মোতায়েনের বিরোধিতা করে।

এই ঘোষণাকে অনেক বিশ্লেষক দেখছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাগরাম ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে একপ্রকার আঞ্চলিক ঐক্যের প্রকাশ হিসেবে।

দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ায় চলমান ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফর নিঃসন্দেহে নতুন সমীকরণ তৈরি করবে, যা ভবিষ্যতে ভারতের আফগাননীতি ও আঞ্চলিক কৌশলে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।