এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ১০ অক্টোবর, ২০২৫, ০২:১০ পিএম
মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘ সংঘাতের মাঝেও কিছু ইসরায়েলি নেতা শান্তির পথ অনুসরণের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছেন। এই স্বীকৃতির অংশ হিসেবে কয়েকজন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। মূলত দুটি প্রধান চুক্তি—১৯৭৮ সালের ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি ও ১৯৯৪ সালের অসলো চুক্তি—এর কারণে এই সম্মান প্রদান করা হয়।
মেনাকেম বেগিন ও ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি (১৯৭৮)
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী মেনাকেম বেগিন ১৯৭৮ সালে মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের সঙ্গে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। তাদের অবদানের মাধ্যমে মিসর ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি স্থাপিত হয় এবং স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হয়।
১৯৭৭ সালে আনোয়ার সাদাত ইসরায়েলের পার্লামেন্টে (নেসেট) বক্তব্য দেন, যা ছিল কোনো আরব নেতার প্রথম সফর। এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্প ডেভিডে দীর্ঘ আলোচনার পর চুক্তিতে উপনীত হওয়া সম্ভব হয়। চুক্তির মূল শর্ত ছিল ইসরায়েল সিনাই উপদ্বীপ মিসরের কাছে ফিরিয়ে দেবে এবং মিসর ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে।
এই চুক্তি ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো আরব দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ শান্তিচুক্তি হিসেবে ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ। বেগিন, যিনি আগে কট্টরপন্থী জাবোতিনস্কি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং ইরগুন-এর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাঁর শান্তি প্রচেষ্টা নোবেল কমিটির চোখে সাহসিকতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।
আইজ্যাক রবিন, শিমন পেরেস ও অসলো চুক্তি (১৯৯৪)
১৯৯৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার যৌথভাবে পান ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিমন পেরেস এবং ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থার (পিএলও) চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত।
১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি স্বশাসন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা আনুষ্ঠানিক রূপ পায়। ফিলিস্তিনিদের প্রথম ইন্তিফাদা ও গোপন আলোচনা শেষে এই চুক্তি সম্ভব হয়।
অসলো চুক্তির মাধ্যমে ইসরায়েল প্রথমবার পিএলওকে ফিলিস্তিনি জনগণের বৈধ প্রতিনিধি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, আর পিএলও ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়। গাজা উপত্যকা এবং পশ্চিম তীরের নির্দিষ্ট অংশে ফিলিস্তিনিদের সীমিত স্বশাসন প্রতিষ্ঠার রূপরেখা নির্ধারিত হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের সময় রবিন ও আরাফাতের ঐতিহাসিক করমর্দন বিশ্বশান্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।
তবে এই শান্তি প্রচেষ্টা ইসরায়েলের অভ্যন্তরে বিভাজন সৃষ্টি করে। কট্টর ডানপন্থীরা এই চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে মনে করেছিল। শান্তি প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকারী রবিনকে ১৯৯৫ সালের ৪ নভেম্বর তেল আবিবে এক উগ্র ইহুদি জাতীয়তাবাদী হত্যা করেন।
আজও শান্তি স্থাপনের এই প্রচেষ্টা ও নেতাদের আত্মত্যাগ ইসরায়েল এবং আন্তর্জাতিক ইতিহাসে স্মরণীয়।