ঢাকা, শনিবার, অক্টোবর ১১, ২০২৫ | ২৬ আশ্বিন ১৪৩২
Logo
logo

রুপির রেকর্ড পতন: বিদেশি চাপ নাকি ভারতের অর্থনীতির ভেতরের দুর্বলতা ফাঁস হচ্ছে?


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ১১ অক্টোবর, ২০২৫, ০২:১০ পিএম

রুপির রেকর্ড পতন: বিদেশি চাপ নাকি ভারতের অর্থনীতির ভেতরের দুর্বলতা ফাঁস হচ্ছে?

ভারতের মুদ্রা রুপি নেমে গেছে সাম্প্রতিক ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে। এক ডলারের বিপরীতে রুপির মান এত নিচে নামার ঘটনা বিশ্লেষকদের মধ্যে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কেউ বলছেন—এ পতন আরও গভীর হবে, আবার কেউ মনে করছেন রুপির এই ধস এখন শেষের পথে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স জানিয়েছে এ তথ্য।

রুপির এই অস্থিরতা মূলত ভারতের অর্থনীতির বহুমুখী চাপের প্রতিফলন। যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত বাণিজ্য শুল্ক, বিদেশি বিনিয়োগে স্থবিরতা আর দুর্বল রপ্তানি প্রবাহ—সবকিছুর মাঝেও ভারতীয় অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে এখনও টিকে আছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

রুপির পতনের কারণ ও বিশ্লেষণ
মার্চের শেষ সপ্তাহে প্রকাশিত গোল্ডম্যান স্যাকসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রুপির ওপর বহিরাগত চাপের বেশিরভাগই ইতোমধ্যে মুদ্রামানে প্রতিফলিত হয়েছে। ব্যাংকটি জানায়, ডলার ও অন্যান্য মুদ্রার বিপরীতে রুপি এখন ‘অবমূল্যায়িত’ বা undervalued অবস্থায় রয়েছে।

গোল্ডম্যান স্যাকস রুপির পতনকে তুলনা করেছে “মুষলধারে মৌসুমি বৃষ্টির” সঙ্গে। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্কনীতি এবং ভারতীয় আইটি খাতে ভিসা খরচ বৃদ্ধি রুপির ওপর বড় প্রভাব ফেলেছে। ফলস্বরূপ, এ বছর এখন পর্যন্ত রুপি এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল মুদ্রা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

ব্যাংক অব আমেরিকা গ্লোবাল রিসার্চও প্রায় একই মন্তব্য করেছে। তাদের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পতনের পর রুপির মান এখন বিনিয়োগকারীদের কাছে আবারও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। ব্যাংকটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ রুপির বিনিময় হার প্রতি ডলারে ৮৬ রুপিতে ফিরে আসতে পারে।

বিশ্লেষকদের ভিন্ন মত
তবে সবাই এতটা আশাবাদী নন। এইচএসবিসি'র এশীয় মুদ্রা বিশেষজ্ঞ জোয়ি চিউ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্য আলোচনায় যত দিন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হবে, তত দিন রুপির ওপর চাপ অব্যাহত থাকবে।

তার মতে, যদি যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক হ্রাস করে, তাহলে রুপি ৮৭ রুপি পর্যন্ত শক্ত অবস্থানে ফিরতে পারে। কিন্তু পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে রুপির পতন অব্যাহত থাকবে।

চলতি বছরে রুপি ইতোমধ্যে ডলারের বিপরীতে প্রায় ৩.৭ শতাংশ মূল্য হারিয়েছে। গত শুক্রবার রুপি লেনদেন হয়েছে প্রতি ডলারে ৮৮.৭৮ রুপিতে—যা ইতিহাসের সর্বনিম্ন ৮৮.৮০ রুপির প্রায় কাছাকাছি।

জাপানের এমইউএফজি ব্যাংক তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, রুপি এখন প্রতিরক্ষামূলক অবস্থায় আছে এবং ধীরে ধীরে ৮৯.৭৫ রুপিতে নামতে পারে। ব্যাংকটি সতর্ক করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কনীতি অব্যাহত থাকলে ভারতের জিডিপি থেকে প্রায় ১ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে, যা বিদেশি মূলধন প্রবাহেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ভবিষ্যতের চাবিকাঠি কোথায়?
বিশ্লেষকদের মতে, রুপির ভবিষ্যৎ এখন অনেকটাই নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতির ওপর। ভারতের অভ্যন্তরীণ প্রবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বহিরাগত চাপ রুপিকে দুর্বল অবস্থায় রাখছে। এখন দেখার বিষয়—রুপি কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, নাকি আরও এক দফা পতন অপেক্ষা করছে ভারতের জন্য?