ঢাকা, রবিবার, অক্টোবর ১২, ২০২৫ | ২৬ আশ্বিন ১৪৩২
Logo
logo

দিল্লিতে তালেবান মন্ত্রীর তাণ্ডব! পাকিস্তান-আমেরিকাকে হুঁশিয়ারি, ভারতকে 'ভাই' ডাক


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ১১ অক্টোবর, ২০২৫, ০৫:১০ পিএম

দিল্লিতে তালেবান মন্ত্রীর তাণ্ডব! পাকিস্তান-আমেরিকাকে হুঁশিয়ারি, ভারতকে 'ভাই' ডাক

ভারত সফরে এসেই পাকিস্তান আর আমেরিকা দুই দেশকেই জবাব দিলেন তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। আমেরিকাকে উদ্দেশ্য করে তাঁর স্পষ্ট বার্তা, 'আফগানিস্তানের মাটিতে কোনো বিদেশি সেনার দখল আমরা মানি না।'

সদ্য নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বারগাম বিমানঘাঁটি ফের আমেরিকার হাতে ছেড়ে দেবার কথা বলার জবাব দিলেন মুত্তাকি। পাশাপাশি, প্রতিবেশী পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও তাঁর ক্ষোভের কোনো কমতি ছিল না।

দিল্লির আফগান দূতাবাসে সফরের দ্বিতীয় দিনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই সব বক্তব্য রাখেন। ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম কোনো আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারত সফর করলেন। জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা শিথিল হবার পরই তাঁর এই সফর সম্ভব হয়েছে।

তালেবান ক্ষমতায় আসার পর ভারত-আফগান সম্পর্কে কিছুটা ঠাণ্ডা ভাব এলেও, এখন সেটাই বদলাচ্ছে। দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একাধিকবার কথা বলার পরই এই সফরের আয়োজন।

সফরের দ্বিতীয় দিনেই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। এরপরেই তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। যদিও সেই সংবাদ সম্মেলনে শুধুমাত্র পুরুষ সাংবাদিকদেরই উপস্থিতি ছিল।

পাকিস্তানকে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি!
ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়েই পাকিস্তান ও আমেরিকা দুটোকেই কড়া জবাব দিলেন মুত্তাকি। আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক ইদানীং বেশ খারাপের দিকেই যাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে ভারতের রাজধানী থেকেই পাকিস্তানকে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বললেন, "খেলা বন্ধ করুন"। তিনি জানান, আফগানদের সাহস কখনোই পরীক্ষা না করার পরামর্শ দিলেন তিনি। এই প্রসঙ্গে তিনি আমেরিকা ও ন্যাটোর দৃষ্টান্তও টেনে আনেন।

কাবুলে হামলার কথা উল্লেখ করে পাকিস্তানকে তিনি বলেন, 'সীমান্তের কাছে প্রত্যন্ত এলাকায় হামলা হয়েছে। পাকিস্তানের এই কাজ একদম ভুল। ৪০ বছর পর আফগানিস্তানে আজ শান্তি ও উন্নতি হচ্ছে। আফগানদের সাহস পরীক্ষা করা উচিত নয়। কেউ যদি তা করতে চায়, তাহলে তাদের উচিত সোভিয়েত ইউনিয়ন, আমেরিকা আর ন্যাটোর কাছ থেকে জেনে নেওয়া, আফগানিস্তানের সঙ্গে খেলতে গেলে কী পরিণতি হয়।'

আমেরিকাকে দিলেন সোজা জবাব
সম্প্রতি বাগরাম বিমানঘাঁটি আবার আমেরিকার নিয়ন্ত্রণে ফেরানোর কথা বলেছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আফগানিস্তান সেই প্রস্তাবে রীতিমতো ক্ষুব্ধ। ভারত সফরে বসেই আমেরিকাকে সেই বার্তা পৌঁছে দিলেন মুত্তাকি।

তাঁর বক্তব্য, 'আফগানিস্তান ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছে, আমরা কখনোই কোনো বিদেশি সামরিক বাহিনীকে মেনে নিইনি এবং ভবিষ্যতেও নেব না। আফগানিস্তান একটি স্বাধীন দেশ এবং সেভাবেই থাকবে। আপনি যদি আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক চান, কূটনৈতিক উপায়ে কথা বলুন, কিন্তু সেনা-uniform পরা কাউকে আমরা গ্রহণ করব না।'

কাবুলে ভারতের দূতাবাস ফের চালু
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে শুক্রবারের বৈঠকের সময় একটি বড় ঘোষণা আসে। তিনি জানান, আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে ভারতের দূতাবাস আবার চালু করা হবে।

এ নিয়ে মুত্তাকি বলেন, 'কাবুলে ভারতের টেকনিক্যাল মিশনকে পূর্ণাঙ্গ দূতাবাসের স্তরে উন্নীত করার এই ঘোষণায় আমি খুবই খুশি।'

'ভারত আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু'
আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে ড. জয়শঙ্কর বলেন, 'ভারত ও আফগানিস্তানের সম্পর্কের জন্য আপনার এই সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আমাদের দীর্ঘমেয়াদি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রতি পুরোপুরি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।'

বৈঠকে ভারতকে আফগানিস্তানের 'ঘনিষ্ঠ বন্ধু' বলে আখ্যা দেন মুত্তাকি। তাঁর কথায়, 'আফগানিস্তানে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের সময় ভারতই প্রথম আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। আফগানিস্তান ভারতকে একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবেই দেখে। আমরা পারস্পরিক সম্মান, বাণিজ্য ও জনগণের মধ্যে সম্পর্কের উপর ভিত্তি করেই এই বন্ধুত্ব চালিয়ে যেতে চাই।'

সংবাদ সম্মেলনে তাঁকে চাবাহার বন্দর নিয়েও প্রশ্ন করা হয়। জবাবে তিনি বলেন, 'চাবাহার একটি চমৎকার বাণিজ্য পথ। এই পথের সব বাধা দূর করতে ভারত ও আফগানিস্তানের একসাথে কাজ করা উচিত। আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার কারণে কিছু সমস্যা হচ্ছে, তাই দুই দেশকেই এই বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। এই রুট দু'টি দেশের জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ।'

জানা গেছে, এই বছরের এপ্রিল মাস থেকেই আফগান নাগরিকদের জন্য নতুন ভিসা নীতি চালু করেছে ভারত। এই নীতির আওতায় চিকিৎসা, ব্যবসা ও শিক্ষার জন্য আরও বেশি সংখ্যক ভিসা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, দেশটিতে নিয়মিত খাদ্য সহায়তাও দিচ্ছে ভারত।

এছাড়াও, আফগানিস্তানকে মোট ২০টি অ্যাম্বুলেন্স দেবে ভারত, যার মধ্যে পাঁচটি শুক্রবারই হস্তান্তর করা হয়েছে। এই সহযোগিতা অব্যাহত রাখারও আশ্বাস দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।