এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর, ২০২৫, ০৩:১০ পিএম

ব্রিটিশ রাজপরিবারে বড় এক ধাক্কা। জেফ্রি এপস্টাইনের কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে অবশেষে নিজের ‘ডিউক অব ইয়র্ক’ উপাধি ত্যাগ করেছেন প্রিন্স অ্যান্ড্রু।
শুক্রবার এক ব্যক্তিগত বিবৃতিতে প্রিন্স অ্যান্ড্রু জানান, রাজা চার্লস ও রাজপরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর ভাষায়, “আমার বিরুদ্ধে চলমান অভিযোগগুলো মহামান্য রাজা ও রাজপরিবারের কাজের প্রতি মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। তাই, আমি স্বেচ্ছায় আমার উপাধি ও সম্মাননা ব্যবহার বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
যৌন অপরাধী জেফ্রি এপস্টাইনের সঙ্গে সম্পর্ক ঘিরে বছরের পর বছর ধরে সমালোচনার মুখে ছিলেন প্রিন্স অ্যান্ড্রু। এখন মনে করা হচ্ছে, ব্রিটেনের প্রাচীনতম ও সম্মানজনক ‘অর্ডার অব দ্য গার্টার’-এর সদস্যপদও তিনি হারাচ্ছেন।
তিনি বলেন, “আমি আগের মতোই পরিবারের প্রতি দায়িত্বকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি এবং জনজীবন থেকে দূরে থাকার পাঁচ বছর আগের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছি। তবে মহামান্যের সম্মতিতে এখন আরও একধাপ এগোনোর সময় এসেছে।”
ওয়েলসের যুবরাজ উইলিয়াম ও রাজা চার্লস—দুজনের সঙ্গেই আলোচনা করে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন অ্যান্ড্রু। যদিও তিনি রাজপুত্র থাকছেন, তবে আর ‘ডিউক অব ইয়র্ক’ উপাধি তাঁর নামের সঙ্গে থাকবে না—যা তাঁকে দিয়েছিলেন প্রয়াত রানি এলিজাবেথ।
এর আগেই তিনি ‘ওয়ার্কিং রয়্যাল’ বা কার্যকর রাজপরিবারের সদস্য থাকা বন্ধ করেছিলেন এবং ‘এইচআরএইচ’ উপাধিও হারিয়েছিলেন। সরকারি অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতিও দীর্ঘদিন বন্ধ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজপুত্র নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন—ভার্জিনিয়া গিফ্রের করা মামলার নিষ্পত্তি, অর্থনৈতিক প্রশ্ন, এমনকি এক কথিত চীনা গুপ্তচরের সঙ্গেও যোগাযোগের অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে।
গিফ্রে অভিযোগ করেছিলেন, ২০০১ সালে লন্ডনে গিসলেইন ম্যাক্সওয়েলের বাড়িতে ১৭ বছর বয়সে তাঁকে যৌন সম্পর্কে বাধ্য করেন অ্যান্ড্রু। আরও দুটি ঘটনার উল্লেখ রয়েছে তাঁর স্মৃতিকথায়—একটি নিউইয়র্কে, অন্যটি এপস্টাইনের ব্যক্তিগত দ্বীপে।
২০২২ সালে অ্যান্ড্রু আদালতের বাইরে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে গিফ্রের মামলা নিষ্পত্তি করেন, যদিও তিনি বারবার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
অ্যান্ড্রুর পদত্যাগের ঘোষণার পর ভার্জিনিয়া গিফ্রের ভাই স্কাই রবার্টস বলেন, “আজ আমাদের চোখে খুশি আর দুঃখ—দুটোই আছে। ভার্জিনিয়া আজ বেঁচে থাকলে খুব গর্বিত হতেন।”
এপস্টাইনের আরেক অভিযোগকারী হ্যালি রবসন বিবিসিকে বলেন, “এটি তিক্ত-মিষ্টি মুহূর্ত। প্রিন্স অ্যান্ড্রুর উপাধি কেড়ে নেওয়া অনেক দেরিতে হলেও, এটি সঠিক সিদ্ধান্ত।”
সম্প্রতি আরও এক কেলেঙ্কারিতে তাঁর নাম উঠে আসে। কথিত চীনা ব্যবসায়ী ইয়াং টেংবো, যিনি ‘ক্রিস ইয়াং’ নামেও পরিচিত, তাঁর সঙ্গে অ্যান্ড্রুর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়িক সম্পর্ক নিয়ে তদন্ত চলছে। যদিও রাজপুত্রের অফিস জানায়, কোনো সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি।
সব মিলিয়ে, দীর্ঘ বিতর্ক ও জনসমালোচনার পর প্রিন্স অ্যান্ড্রুর এই পদত্যাগ রাজপরিবারের জন্য এক যুগান্তকারী মোড় আনল বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।