এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর, ২০২৫, ০৩:১০ পিএম

ভাবতে পারেন, পৃথিবীর এমন একটি জায়গা আছে যেখানে টানা ১৩৬ দিন সূর্য ওঠে না! হ্যাঁ, এমনই অবিশ্বাস্য এক স্থান হলো অ্যালার্ট —কানাডার দূরবর্তী আর্কটিক অঞ্চলের ছোট্ট কিন্তু বিশ্বখ্যাত বসতি। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তরের স্থায়ীভাবে বসবাসযোগ্য এলাকা, যা উত্তর মেরু থেকে মাত্র ৮১৭ কিলোমিটার দূরে।
অ্যালার্টের অবস্থান কানাডার নুনাভুট প্রদেশের এলসমিয়ার দ্বীপের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে, যেখানে একটি সামরিক ঘাঁটি ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। এখানকার আবহাওয়া পৃথিবীর সবচেয়ে কঠোরগুলোর একটি—বরফে মোড়া, হাড়-কাঁপানো ঠান্ডা আর দীর্ঘ অন্ধকারে ঢাকা।
সূর্য ছাড়াই ১৩৬ দিন
প্রতি বছর অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত চলে এই অন্ধকারের রাজত্ব। এই সময়কে বলা হয় ‘পোলার নাইট’—যখন সূর্য ১৩৬ দিন পর্যন্ত দিগন্তের ওপরে ওঠে না।
এ বছর অ্যালার্টে শেষবার সূর্য দেখা গেছে ১৩ অক্টোবর। পরবর্তী সূর্যোদয় হবে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ সালে! এই সময়টায় বাসিন্দারা পুরোপুরি কৃত্রিম আলোয় নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। সূর্যের আলো না থাকায় তাদের দেহঘড়ি বা সার্কেডিয়ান রিদম বিঘ্নিত হয়, মানসিক চাপ বাড়ে, এমনকি শরীরেও দেখা দেয় নানা সমস্যা।
তাপমাত্রা এতটাই কমে যায় যে থার্মোমিটার প্রায়ই -৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যায়। ঠান্ডা, নিঃসঙ্গতা আর সূর্যহীন পরিবেশ—সব মিলিয়ে এখানকার জীবন যেন এক চরম পরীক্ষা।
অ্যালার্টের বাইরেও অন্ধকারের পৃথিবী
অ্যালার্টই একমাত্র নয়। পৃথিবীর আরও কয়েকটি জায়গায় প্রতিবছর এমন দীর্ঘ অন্ধকার নামে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নরওয়ের স্ভালবার্ড ও জান মায়েন দ্বীপপুঞ্জে পোলার নাইট স্থায়ী হয় প্রায় ১১১ দিন—২৬ অক্টোবর থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
নরওয়ের উত্তরাঞ্চলীয় শহর ত্রোমসোতে ৪৯ দিন সূর্য ওঠে না—২৭ নভেম্বর থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত।
আলাস্কার উটকিয়াভিক (পূর্বে ব্যারো)-তে ৬৫ দিন সূর্য দেখা যায় না, আর রাশিয়ার মুরমানস্কে থাকে প্রায় ৪০ দিনের অন্ধকার।
গ্রিনল্যান্ডের ইলুলিসাটে অক্টোবরের শেষ থেকে শুরু হয় একই দৃশ্য।
অন্যদিকে পৃথিবীর দক্ষিণ প্রান্তে, অ্যান্টার্কটিকার দক্ষিণ মেরু স্টেশনেও প্রায় ছয় মাস সূর্যের দেখা মেলে না, মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সেখানে এই দীর্ঘ অন্ধকারের মধ্যেও চলে গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক গবেষণা।
কেন এমন হয়?
এই রহস্যের কারণ পৃথিবীর অক্ষের ঢাল। শীতকালে পৃথিবীর পোলার অঞ্চল সূর্য থেকে এমনভাবে হেলে থাকে যে, সূর্য দিগন্তের ওপরে উঠতে পারে না। ফলে আলোকরশ্মি অনুভূমিকের নিচে থেকেই যায়, আর পুরো অঞ্চল ডুবে যায় গভীর অন্ধকারে।
তবে মজার বিষয় হলো—গ্রীষ্মকালে ঠিক উল্টোটা ঘটে। তখন একই জায়গায় দেখা যায় ‘মিডনাইট সান’, অর্থাৎ সূর্য ডুবে না—দিনের আলো অব্যাহত থাকে ২৪ ঘণ্টা জুড়ে!
প্রকৃতির এই দুই চরম বৈপরীত্যই অ্যালার্টকে করে তুলেছে এক অবিশ্বাস্য ও রোমাঞ্চকর স্থান—যেখানে সূর্যের অনুপস্থিতিই যেন এক অদ্ভুত সৌন্দর্যের গল্প বলে।