ঢাকা, রবিবার, অক্টোবর ২৬, ২০২৫ | ১১ কার্তিক ১৪৩২
Logo
logo

চীনের হাত ধরে মিয়ানমারের জয়! কিয়াউকম শহর পুনর্দখল, বিদ্রোহীদের ধাক্কা


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ২৪ অক্টোবর, ২০২৫, ০৮:১০ পিএম

চীনের হাত ধরে মিয়ানমারের জয়! কিয়াউকম শহর পুনর্দখল, বিদ্রোহীদের ধাক্কা

মিয়ানমারের চীন সীমান্তের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিয়াউকম শহরটি মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে সামরিক বাহিনী বিদ্রোহীদের কাছ থেকে পুনর্দখল করেছে। এটি স্পষ্টভাবে দেখায় যে মিয়ানমারে এখন সামরিক ভারসাম্য জান্তার পক্ষে ঝুঁকে গেছে।

একসময় বিদ্রোহীদের জন্য বড় জয় ছিল এই শহর দখল। তখন মনে হয়েছিল, সামরিক জান্তার মনোবল ভেঙে পড়ছে। কিন্তু সেনাবাহিনী অতীতের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, চীনের দেওয়া উন্নত ড্রোন ও প্রযুক্তির সাহায্যে লড়াইয়ে ফিরে এসেছে। 

কিয়াউকম শহরের এই দখল-পুনর্দখলের লড়াইয়ে এলাকাটিকে বড় মূল্য দিতে হয়েছে। টিএনএলএর নিয়ন্ত্রণে থাকাকালে সামরিক বাহিনী প্রায় প্রতিদিনই সেখানে বিমান হামলা চালিয়েছে। যুদ্ধবিমান থেকে ৫০০ পাউন্ডের বোমা ফেলা হয়েছে এবং কামান ও ড্রোন দিয়ে বিদ্রোহীদের অবস্থানে আঘাত করা হয়েছে।

টিএনএলএর মুখপাত্র টার পার্ন লা বিবিসিকে বলেন, “বিদ্রোহীদের তুলনায় সেনাবাহিনীর কাছে বেশি সৈন্য, ভারী অস্ত্র আর যুদ্ধবিমান রয়েছে।” তিনি যখন কথা বলছিলেন, তখন জান্তা বাহিনী টিএনএলএর দখলে থাকা শেষ শহর হিসিপাও এলাকাও পুনর্দখল করে। এর ফলে চীন সীমান্তের রাস্তায় জান্তা তাদের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে এনেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই পুনর্দখল সম্ভব হয়েছে চীনের সমর্থনের কারণে। চীন জান্তার আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের পরিকল্পনাকে সমর্থন করছে। সামরিক বাহিনী হারানো এলাকাগুলো পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে, যাতে সেখানে নির্বাচন হতে পারে। জান্তা বিদ্রোহীদের সস্তা ড্রোনের সুবিধার জবাবে চীন থেকে হাজার হাজার আধুনিক ড্রোন কিনেছে এবং তাদের সৈন্যদের এই অস্ত্র ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

এছাড়া, ধীরগতির মোটরচালিত প্যারাগ্লাইডার ব্যবহার করে নির্ভুলভাবে বোমা ফেলা হচ্ছে। চীন ও রাশিয়া থেকে পাওয়া বিমান দিয়ে অবিরাম হামলা চলছে। এই বিমান হামলায় চলতি বছর অন্তত এক হাজার বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষক মরগান মাইকেলস বলেন, সামরিক মনোবল কমলেও জান্তার কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ভাঙেনি। ২০২৩ সালের শেষে জান্তা জোরপূর্বক নিয়োগ শুরু করে, যার ফলে ৬০ হাজারের বেশি তরুণ সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। এটি যুদ্ধক্ষেত্রে বড় পার্থক্য এনেছে। অ্যাকলেডের বিশ্লেষক সু মন বলেন, ড্রোন জান্তাকে বড় সুবিধা দিয়েছে, যার ফলে বিদ্রোহীরা পিছু হটছে।

অন্যদিকে, বিদ্রোহীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা ও বিভক্তি তাদের আন্দোলনকে দুর্বল করছে। স্থানীয় গ্রামবাসী ও শহর থেকে পালিয়ে আসা তরুণদের নিয়ে গঠিত ‘পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস’ (পিডিএফ) দুর্বলভাবে সংগঠিত। তাদের মধ্যে বার্মিজ সংখ্যাগরিষ্ঠদের প্রতি গভীর অবিশ্বাস রয়েছে। তারা ২০২১ সালে অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত জাতীয় ঐক্য সরকারের নেতৃত্ব মানে না, ফলে তাদের কোনো কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নেই।

২০২৩ সালের অক্টোবরে শান রাজ্যে তিনটি জাতিগত গোষ্ঠীর জোট ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ ‘অপারেশন ১০২৭’ শুরু করে এবং ১৮০টির বেশি ঘাঁটি দখল করে। কিন্তু জল্পনা থাকলেও সামরিক শাসনের পতন হয়নি। মরগান মাইকেলস বলেন, তখন এটিকে ভুলভাবে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ বিজয় হিসেবে দেখা হয়েছিল। চীন এখন জান্তাকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে, কারণ বেইজিং চায় না রাষ্ট্র ভেঙে পড়ুক।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, চীন মিয়ানমারে বিশৃঙ্খলা ও যুদ্ধের বিরোধী। রাষ্ট্র যখন টলতে শুরু করে, তখন চীন হস্তক্ষেপ করে। সীমান্তে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণে বিদ্রোহীদের জন্য ড্রোন বা এর উপাদান পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। জান্তার কাছে উন্নত জ্যামিং প্রযুক্তি রয়েছে, যা বিদ্রোহীদের ড্রোনের কার্যকারিতা নষ্ট করছে।