এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর, ২০২৫, ০৮:১০ পিএম

ফ্রান্সের বিখ্যাত ল্যুভর মিউজিয়ামে চুরির কয়েক ঘণ্টা পরই আরেকটি জাদুঘর থেকে প্রায় দুই হাজার স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা চুরির খবর এসেছে। এই মুদ্রাগুলোর মূল্য কমপক্ষে এক লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এই তথ্য জানিয়েছে।
ফরাসি দার্শনিক দনি দিদরোর নামে প্রতিষ্ঠিত মাইসোঁ দে লুমিইয়েরে জাদুঘরে এই চুরির ঘটনা ঘটেছে। ধারণা করা হচ্ছে, রবিবার ১৯ অক্টোবর রাতে এই মুদ্রাগুলো চুরি হয়। সাপ্তাহিক ছুটির পর মঙ্গলবার জাদুঘর খুললে কর্মীরা একটি ভাঙা প্রদর্শনী কেস দেখতে পান এবং কর্তৃপক্ষকে জানান।
স্থানীয় প্রশাসনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এই মুদ্রাগুলো চুরি করা হয়েছে।
চুরি হওয়া মুদ্রাগুলো ১৭৯০ থেকে ১৮৪০ সালের মধ্যে তৈরি। ২০১১ সালে ভবন সংস্কারের সময় এগুলো আবিষ্কৃত হয় এবং পরে শহরের নিজস্ব সংগ্রহ হিসেবে জাদুঘরে রাখা হয়।
সম্প্রতি ফ্রান্সের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। গত মাসে প্যারিসের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম থেকে ১৫ লাখ ইউরো মূল্যের ছয়টি স্বর্ণের টুকরো চুরি হয়। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে স্পেনের বার্সেলোনায় একজন চীনা নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়।
এছাড়া, সেপ্টেম্বরে লিমোজ শহরের চীনামাটি জাদুঘর থেকে দুটি চীনামাটির পাত্র ও একটি ফুলদানি চুরি হয়, যার মূল্য প্রায় ৬৫ লাখ ইউরো। এগুলো এখনও উদ্ধার হয়নি। একজন সিরামিক বিশেষজ্ঞ বলেন, এই শিল্পকর্মগুলো সাধারণ বাজারে বিক্রি করা কঠিন, কারণ এগুলো সহজেই চেনা যায়।
সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ল্যুভর মিউজিয়ামের। রবিবার দিনের আলোয় একদল অজ্ঞাত ব্যক্তি ৮৮ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের ঐতিহাসিক গয়না চুরি করে। শ্রমিক সেজে তারা যান্ত্রিক মই ও শক্তিশালী সরঞ্জাম ব্যবহার করে গ্যালারি অফ অ্যাপোলোতে ঢোকে। চুরি হওয়া গয়নার মধ্যে ছিল সম্রাট নেপোলিয়নের স্ত্রীর হীরা-এমারেল্ড নেকলেস, সম্রাজ্ঞী ইউজেনির টিয়ারা এবং রানী মেরি-আমেলির মালিকানাধীন কয়েকটি অলঙ্কার।
শিল্পকর্ম বিশেষজ্ঞ গোয়েন্দা আর্থার ব্র্যান্ড বলেন, ল্যুভরে চুরি করে পার পাওয়া গেলে স্থানীয় অপরাধীরা কাছাকাছি জাদুঘরে হানা দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। এর ফলে ইউরোপজুড়ে অনুকরণমূলক চুরির ঢেউ দেখা দিতে পারে।
ল্যুভরের পরিচালক লরঁস দে কার ফরাসি সিনেটে বলেন, জাদুঘরের চারপাশের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো পুরনো ও অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। চোরেরা যে দেয়াল দিয়ে ঢুকেছিল, সেখানকার একমাত্র ক্যামেরা বিপরীত দিকে ঘোরানো ছিল।
প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, ল্যুভরের এক-তৃতীয়াংশ কক্ষে কোনো সিসিটিভি ছিল না এবং অ্যালার্ম সিস্টেমও কাজ করেনি। ফরাসি বিচারমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানা এটিকে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতা বলে উল্লেখ করেন।
ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের ঘটনায় দেখা গেছে, চুরির আগে ভবনের অ্যালার্ম ও নজরদারি ব্যবস্থা সাইবার হামলায় নিষ্ক্রিয় করা হয়েছিল।