এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর, ২০২৫, ০৬:১০ পিএম

বতসোয়ানার একটি খনি থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রকৃতির এক অনবদ্য সৃষ্টি – একটি বিরল দুই রঙের হীরা। একদম অর্ধেকটা ঝলমলে গোলাপী, আর বাকি অর্ধেকটা কাঁচের মতো স্বচ্ছ। এই আশ্চর্য হীরাটি পরীক্ষা করেছে বিশ্ববিখ্যাত জেমোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের গবেষণা কেন্দ্র।
হীরেটির আকার কতটা?
বিশেষজ্ঞদের মাপকাঠি অনুযায়ী, হীরেটির মাপ হচ্ছে প্রায় ১ ইঞ্চি বাই ০.৬৩ ইঞ্চি বাই ০.৫৭ ইঞ্চি। এর ওজনটা চোখ কপালে তোলার মতো – পুরো ৩৭.৪১ ক্যারেট!
রহস্য কী বলছে গবেষণা?
জেমোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের একজন সিনিয়র ম্যানেজার স্যালি ইটন-মাগানা জানান, হীরেটির গোলাপী অংশটা কিন্তু আগে সাদাই ছিল। লাখ লাখ বছর আগে ভূ-তাত্ত্বিক এক বিশাল পরিবর্তনের ফলে, সম্ভবত পাহাড় সৃষ্টির সময়, চাপে পড়ে এটির রঙ বদলে গোলাপী হয়ে যায়। আর সাদা অংশটা তৈরি হয়েছে পরে।
গোলাপী হীরা এত দুর্লভ কেন?
গোলাপী হীরা পৃথিবীতে খুবই কম পাওয়া যায়। এগুলো তৈরি হয় পৃথিবীর ভেতরে, ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০০ মাইল নিচে, প্রচণ্ড তাপ ও চাপের মধ্যে। সেখানে কার্বন পরমাণুগুলো জমাট বেঁধে এই রত্নের সৃষ্টি করে। এরপর সক্রিয় কোনো আগ্নেয়গিরি এগুলোকে ভূপৃষ্ঠের কাছে নিয়ে আসে। হীরার রঙ আসে এর ভেতরে আটকে থাকা বিভিন্ন খনিজ বা 'অশুদ্ধি' থেকে। কিন্তু গোলাপী রঙের পেছনের কারণটা আলাদা। এটি হয় হীরার ভেতরের কাঠামো বেঁকেচুরে যাওয়ার ফলে। তবে এই বক্রতা যদি বেশি হয়, তাহলে হীরার রঙ হয় বাদামী। গোলাপী রঙ পেতে হলে তাপমাত্রা ও চাপের একটা নিখুঁত সমন্বয় প্রয়োজন।
একজন ভূতত্ত্ববিদের ভাষ্যে, "পৃথিবীতে বাদামী হীরার ভিড়, কিন্তু গোলাপী হীরা খুঁজে পাওয়া সত্যিই সৌভাগ্যের ব্যাপার।"
এটা কি প্রথম এমন হীরা?
না, এই ধরণের গোলাপী-সাদা হীরা এটিই প্রথম নয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর আগে তারা যতগুলো গোলাপী হীরা পরীক্ষা করেছেন, সেগুলোর ওজন ২ ক্যারেটের বেশি ছিল না। তাই এই ৩৭.৪১ ক্যারেটের দানবীয় হীরাটি সত্যিই ব্যতিক্রম।
খনিটির সোনালী ইতিহাস
এই অনন্য হীরাটি মিলেছে বতসোয়ানার কারোও খনি থেকে। এই খনিটি এর আগেও বেশ কয়েকবার আলোচনায় এসেছে বড় বড় হীরা খুঁজে পেয়ে। এখান থেকেই উদ্ধার হয়েছিল ২৪৮৮ ক্যারেটের একটি দানব হীরা, যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রুক্ষ হীরা। এছাড়াও ৬২ ক্যারেটের 'মোটসওয়েডি' হীরা এবং 'বোইতুমেলো' নামের একটি ছোট গোলাপী হীরাও এখানকারই সন্ধান।