ঢাকা, রবিবার, অক্টোবর ২৬, ২০২৫ | ১১ কার্তিক ১৪৩২
Logo
logo

আদানিকে বাঁচাতে এলআইসির টাকায় ৩.৯ বিলিয়ন ডলারের গোপন পরিকল্পনা ফাঁস মোদি সরকারের


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ২৫ অক্টোবর, ২০২৫, ০৬:১০ পিএম

আদানিকে বাঁচাতে এলআইসির টাকায় ৩.৯ বিলিয়ন ডলারের গোপন পরিকল্পনা ফাঁস মোদি সরকারের

ভারতে ফের উঠেছে বড় বিতর্ক! এবার নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ—রাষ্ট্রীয় বিমা সংস্থা এলআইসিকে ব্যবহার করে গোপনে গৌতম আদানির ঋণগ্রস্ত ব্যবসা সাম্রাজ্য বাঁচানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। বিষয়টি সামনে এনেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার প্রায় ৩৯০০ কোটি রুপি বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছিল ভারত সরকার, যাতে আদানি গ্রুপের আর্থিক সংকট সামাল দেওয়া যায়।

ওয়াশিংটন পোস্টের হাতে আসা নথি অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মে মাসে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়, আর্থিক পরিষেবা বিভাগ (ডিএফএস), এলআইসি এবং নীতি আয়োগ একত্রে এই বিনিয়োগ কৌশল তৈরি করে। পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য ছিল—আদানি গ্রুপের বন্ড ও ইক্যুইটিতে বিলিয়ন ডলার ঢালা, যাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো যায়।

এলআইসির একক অর্থায়ন ও বিতর্কের ঝড়

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আদানি পোর্টস ৫৮৫ মিলিয়ন ডলারের একটি বন্ড ইস্যু করে, যার সম্পূর্ণ অর্থায়ন করেছে শুধুমাত্র এলআইসি।

মে মাসের ৩০ তারিখে আদানি গ্রুপ ঘোষণা দেয়—পুরো বন্ডটি অর্থায়ন করেছে একমাত্র বিনিয়োগকারী, এলআইসি। সমালোচকদের মতে, এটি জনগণের অর্থের ‘অপব্যবহার’ এবং রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের উদাহরণ।

আদানির বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ

এর এক বছর আগেই আদানি গ্রুপের ঋণ ২০ শতাংশ বেড়ে যায় এবং তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে।

বর্তমানে আদানি গ্রুপ একাধিক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক তদন্তের মুখে। মার্কিন বিচার বিভাগ ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন  আদানি ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে ঘুষ ও আর্থিক জালিয়াতির অভিযোগ এনেছে। অভিযোগে বলা হয়, তারা জ্বালানি চুক্তি জেতার জন্য ২৫০ মিলিয়ন ডলারের অবৈধ লেনদেন ও মিথ্যা বিবৃতি দিয়েছিল।
যদিও আদানি এই অভিযোগগুলোকে সম্পূর্ণ “ভিত্তিহীন” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদন ও বিদেশি ব্যাংকের সতর্কতা

২০২৩ সালে মার্কিন শর্ট-সেলার হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে স্টক ম্যানিপুলেশন ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তোলে। এরপর থেকেই ইউরোপ ও আমেরিকার বেশ কয়েকটি বড় ব্যাংক আদানিকে ঋণ দিতে সংকোচ বোধ করে।

সরকারি কর্মকর্তাদের চোখে ‘দূরদর্শী উদ্যোক্তা’ আদানি

এই অবস্থায়, ডিএফএসের অভ্যন্তরীণ নথিতে ভারতীয় কর্মকর্তারা আদানিকে “দূরদর্শী উদ্যোক্তা” হিসেবে বর্ণনা করেন। তাদের মতে, বন্দর, জ্বালানি ও অবকাঠামো খাতে আদানির ব্যবসা ভারতের অর্থনীতির জন্য অপরিহার্য।

বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা: জনগণের অর্থে ঝুঁকি

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন—এলআইসি লাখো নিম্ন আয়ের ভারতীয়র জীবন বিমা সংস্থা, যার তহবিল দিয়ে একটি রাজনৈতিকভাবে ঘনিষ্ঠ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এত বড় অঙ্কের বিনিয়োগ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
স্বাধীন বিশ্লেষক হেমিন্দ্র হাজারি বলেছেন, “একটি বেসরকারি করপোরেটে এলআইসির এমন বড় বিনিয়োগ অস্বাভাবিক। যদি কোনো ক্ষতি হয়, তাহলে একমাত্র সরকারকেই উদ্ধার করতে হবে।”

বিরোধীদের আক্রমণ: ‘মোদানি মেগাস্ক্যাম’

প্রতিবেদন প্রকাশের পরই বিরোধী দলগুলো তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের মহুয়া মৈত্র টুইটে বলেন, “ভারতীয় করদাতাদের ৩০ হাজার কোটি রুপি কীভাবে আদানিদের ‘পিগিব্যাংক’ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে, তা দেখুন।”
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এক্স-এ পোস্ট করে বলেন, ২০২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর আদানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে অভিযোগ ওঠার পর মাত্র ৪ ঘণ্টায় এলআইসির ৭,৮৫০ কোটি রুপির লোকসান হয়। তিনি একে “মোদানি মেগাস্ক্যাম” বলে অভিহিত করেন এবং অভিযোগ করেন, সরকারের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চুক্তি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিক্রির মধ্যেই এই কেলেঙ্কারির সূত্র।

আদানি গ্রুপের প্রতিক্রিয়া

ওয়াশিংটন পোস্টকে দেওয়া বিবৃতিতে আদানি গ্রুপ স্পষ্ট জানিয়েছে—সরকারের এই সিদ্ধান্তে তাদের কোনো ভূমিকা নেই। তারা রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলেছে এবং দাবি করেছে, তাদের ব্যবসার উত্থান মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অনেক আগেই শুরু হয়েছিল।