 
	 
	 
		    এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:১০ পিএম

ভারতের আসাম রাজ্যের শ্রীভূমি জেলায় জাতীয় কংগ্রেসের একটি কর্মসূচিতে ভারতের জাতীয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি গাওয়া নিয়ে রাজ্যটির রাজনীতিতে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, অনুষ্ঠানে জেলা পর্যায়ের এক কংগ্রেস নেতা 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি' গানটি নিজের কণ্ঠে গাওয়ার 'অপরাধে' শাসক দল বিজেপি রাতারাতি তাকে 'বাংলাদেশি' তকমা লাগিয়ে দিয়েছে।
কেন এত বিতর্ক?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গানটি প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের 'জাতীয় সংগীত' হিসেবে পরিচিত। এই সুযোগ নিয়েই বিজেপি রাজনীতিতে মাঠ গরম করার চেষ্টা শুরু করেছে।
বিজেপির অভিযোগ: বিজেপি বলছে, কংগ্রেস এখন ‘বাংলাদেশমুগ্ধ’। তাদের বক্তব্য, এমন এক সময় এই ঘটনা ঘটল যখন বাংলাদেশের নতুন মানচিত্রে উত্তর-পূর্ব ভারতের বেশিরভাগ অংশকে নিজেদের বলে দেখানো হয়েছে। তাদের মতে, এটি কংগ্রেসের সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ।
কংগ্রেসের বক্তব্য: বিজেপির অভিযোগকে 'অযৌক্তিক' বলছেন কংগ্রেস নেতারা এবং সাধারণ মানুষ। তাদের দাবি, 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি' গানটি মূলত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি দেশপ্রেমের গান।
ইতিহাস: ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে তিনি গানটি লিখেছিলেন। গানটি তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের বিভাজন নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছিল।
১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়ার বহু বছর পর 'আমার সোনার বাংলা'কে নিজেদের জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করে বাংলাদেশ।
দুই বাংলার বাঙালিরা এখনও দেশপ্রেম ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে গানটি নানা অনুষ্ঠানে গেয়ে থাকেন।
শ্রীভূমি জেলাটি যেহেতু প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের সীমানার খুব কাছাকাছি এবং বরাক উপত্যকার অন্তর্গত, তাই সেখানে এই গান গাওয়াটা মোটেও আশ্চর্যের বিষয় নয় বলেই মনে করছেন অনেকেই।
সাংসদ গৌরব গগৈয়ের কড়া জবাব
এই বিতর্কে মুখ খুলেছেন কংগ্রেস সাংসদ তথা লোকসভার ডেপুটি লিডার গৌরব গগৈ। তিনি বিজেপির অভিযোগের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
তিনি বলেন, "বিধুভূষণ দাস, ৮০ বছরের একজন প্রবীণ সদস্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'আমার সোনার বাংলা' আমি তোমায় ভালোবাসি গেয়েছেন। বিজেপি বলছে, এটা নাকি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের গান। তারা বুঝতেই পারছে না এই গানের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব কতটা।"
তিনি আরও যোগ করেন, "রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জাতীয় কবি হিসাবে ভারতের গর্ব এবং নোবেলজয়ী সাহিত্যিক। একটা বাংলা গান গাওয়া মানে আমাদের ঐতিহ্য ও সাহিত্যিক উত্তরাধিকারের উদযাপন, সেটাকে কেন বিকৃতভাবে দেখা হবে?"
বিজেপি অনড়, মুখ্যমন্ত্রী যাচ্ছেন দিল্লিতে
তবে বিজেপি কিন্তু নিজের অবস্থানে অনড়। দলের আসাম শাখা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছে, “সংকেত একদম পরিষ্কার। কয়েক দিন আগেই বাংলাদেশ সাহস করে এমন মানচিত্র প্রকাশ করেছে যেখানে গোটা উত্তর-পূর্বকে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আর এখন সেই বাংলাদেশমুগ্ধ কংগ্রেস আসামে বসে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গাইছে! এর পরেও কেউ যদি বোঝে না কী পরিকল্পনা চলছে, তাহলে হয় সে অন্ধ নয়তো সহযোগী।”
আসামের মন্ত্রী অশোক সিংহলও লিখেছেন, “বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত 'আমার সোনার বাংলা' গাওয়া হয়েছে আসামের শ্রীভূমিতে কংগ্রেসের এক সভায়, সেই দেশ, যারা উত্তর-পূর্বকে আলাদা করতে চায়! এখন স্পষ্ট কেন কংগ্রেস বছরের পর বছর বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের উৎসাহ দিয়েছে, ভোটব্যাংক রাজনীতির জন্য, রাজ্যের জনতাত্ত্বিক ভারসাম্য নষ্ট করতেই।”
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা জানিয়েছেন, তিনি এই বিষয়টিকে জাতীয় স্তরের রাজনৈতিক বিতর্কে নিয়ে যেতে চান। তিনি সংশ্লিষ্ট জাতীয় কংগ্রেস নেতার গানের ভিডিও ফুটেজটি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে দিল্লির বিজেপি নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়েছেন।