ঢাকা, বুধবার, নভেম্বর ৫, ২০২৫ | ২০ কার্তিক ১৪৩২
Logo
logo

চীনের জে-৩৬ যুদ্ধবিমান: ষষ্ঠ প্রজন্মে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যেতে চাইছে বেইজিংয়ের আকাশ শক্তি


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ০৪ নভেম্বর, ২০২৫, ০১:১১ পিএম

চীনের জে-৩৬ যুদ্ধবিমান: ষষ্ঠ প্রজন্মে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যেতে চাইছে বেইজিংয়ের আকাশ শক্তি

বিশ্বের আকাশে আধিপত্যের দৌড়ে এবার নতুন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে চীন। তাদের ষষ্ঠ প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ধবিমান জে-৩৬ প্রকল্প নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যে ফাটল ধরাতে চায় বেইজিং। সাম্প্রতিক সময়ে এই বিমানের নতুন প্রোটোটাইপ ফ্লাইট ও পরীক্ষামূলক প্রদর্শন প্রমাণ করছে—চীন এখন দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে ভবিষ্যতের আকাশযুদ্ধে।

সাধারণত আধুনিক যুদ্ধবিমান তৈরি ও পরীক্ষায় বছরের পর বছর সময় লাগে। কিন্তু চীনের ক্ষেত্রে বিষয়টা একেবারেই আলাদা। যুক্তরাষ্ট্র বহু বছর ধরে স্টেলথ প্রযুক্তির শীর্ষে থাকলেও, চীনের দ্রুত অগ্রগতি দেখাচ্ছে যে তারা আর পেছনে নেই—বরং ভবিষ্যতের আকাশ দখলের জন্য জোর প্রস্তুতিতে আছে।

দ্বিতীয় প্রোটোটাইপ উড্ডয়ন, মাত্র ১০ মাসে নতুন রেকর্ড

চীনা সামাজিক মাধ্যমে সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ছবিতে দেখা গেছে, তিন ইঞ্জিনবিশিষ্ট বিশাল এক স্টেলথ যুদ্ধবিমান আকাশে উড়ছে। প্রতিরক্ষা পর্যবেক্ষকরা একে ‘জে-৩৬’ নাম দিয়েছেন। এটি হলো দ্বিতীয় প্রোটোটাইপ, যা চেংদুর সামরিক-শিল্পাঞ্চলের কাছে পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন করেছে।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, প্রথম প্রোটোটাইপ প্রদর্শনের মাত্র ১০ মাসের মধ্যেই দ্বিতীয় প্রোটোটাইপ তৈরি ও উড্ডয়ন সম্পন্ন করেছে চীন। অর্থাৎ, দেশটি আধুনিক যুদ্ধবিমান উন্নয়নে সময় নষ্ট করছে না, বরং ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে চলেছে।

নতুন ডিজাইন ও উন্নত কাঠামোতে ভবিষ্যতের ছাপ

নতুন প্রোটোটাইপে রয়েছে বেশ কিছু পরিবর্তন—নতুন এয়ার ইনটেক ডিজাইন, পুনঃনকশাকৃত ল্যান্ডিং গিয়ার এবং নতুন এক্সহস্ট লেআউট। আগের মতোই ডেল্টা-আকৃতির ডানা ও দুই পাইলটের সাইড-বাই-সাইড ককপিট রয়েছে।

পূর্বের সংস্করণে ইঞ্জিনের ইনফ্রারেড সিগনেচার কমাতে রিসেসড এক্সহস্ট ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু নতুন সংস্করণে যুক্ত হয়েছে টু-ডাইমেনশনাল থ্রাস্ট-ভেক্টরিং নোজল, যা ম্যানুভারিবিলিটি বাড়ায়, যদিও এতে কিছুটা স্টেলথ ক্ষমতা কমতে পারে। এছাড়া ডাইভার্টারলেস সুপারসনিক ইনলেট ও উন্নত ল্যান্ডিং গিয়ার ডিজাইন ইঙ্গিত দেয়, চীন এখন অ্যারোডায়নামিক দক্ষতা ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের উন্নয়নে মনোযোগ দিচ্ছে।

দ্রুত উন্নয়নে বিশেষজ্ঞদের বিস্ময়

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের এই দ্রুত অগ্রগতি “লিপফ্রগিং কৌশল”—অর্থাৎ ধাপে ধাপে নয়, বরং এক লাফে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া পঞ্চম প্রজন্মের ফাইটার পরিচালনা করছে। তবে ষষ্ঠ প্রজন্মের দৌড়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনই এগিয়ে।

এই নতুন প্রজন্মের ফাইটারগুলো ড্রোন নিয়ন্ত্রণে সক্ষম, এমনকি কিছু ড্রোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে আক্রমণ চালাতেও পারবে। জে-৩৬-ও সেই পথে হাঁটছে।

বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ: ভবিষ্যতের যুদ্ধ হবে এআই নির্ভর

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল এয়ার ফোর্সের এয়ার ভাইস মার্শাল জেমস বেক বলেছেন, “পঞ্চম প্রজন্মের ফাইটার এখন মৌলিক, কিন্তু ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে ষষ্ঠ প্রজন্মের বিমানের ওপর।”

তিনি আরও বলেন, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ দেখিয়েছে, আধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করা কতটা কঠিন। তাই আগামী যুদ্ধক্ষেত্র হবে এআই, স্বয়ংক্রিয় ড্রোন, উন্নত স্টেলথ ও দীর্ঘ পাল্লার অস্ত্রের যুদ্ধ। তবে এমন বিমান তৈরি করতে দশকেরও বেশি সময় লাগে।

উৎপাদনে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য চ্যালেঞ্জ চীন

চীনের দ্রুত উৎপাদন হার যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ। বর্তমানে চীনের হাতে ৩০০টির বেশি জে-২০ রয়েছে, এবং গড়ে প্রতি আট দিনে একটি নতুন বিমান তৈরি হচ্ছে। লক্ষ্য—প্রতি বছর ৫০টি জে-৩৫ উৎপাদন।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫ উৎপাদন হার বছরে ১৪০টি হলেও, চীনের গতির সঙ্গে পাল্লা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। চীন দক্ষিণ চীন সাগর অঞ্চলে তার বিমান শক্তি কেন্দ্রীভূত করছে, যা আঞ্চলিক আধিপত্য বজায় রাখতে বড় ভূমিকা রাখছে।

আকাশযুদ্ধের ভবিষ্যৎ: এশিয়া কি ছাড়িয়ে যাবে আমেরিকাকে?

যদি যুক্তরাষ্ট্র তাদের গতি না বাড়ায়, আর চীন তার প্রকল্পকে আরও ত্বরান্বিত করে, তাহলে প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী আকাশে মার্কিন আধিপত্যে ফাটল ধরতে পারে।

এই প্রতিযোগিতায় কোনো পক্ষেরই পিছিয়ে পড়ার সুযোগ নেই—কারণ ভবিষ্যতের আকাশযুদ্ধ নির্ধারণ করবে প্রযুক্তির গতিই।