ঢাকা, বুধবার, নভেম্বর ৫, ২০২৫ | ২০ কার্তিক ১৪৩২
Logo
logo

যুক্তরাষ্ট্রের জন্য খামেনির অঘোষিত শর্ত! 'ইসরাইলপ্রীতি ছাড়ুন, নয়তো আলোচনা নয়'"


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ০৪ নভেম্বর, ২০২৫, ০২:১১ পিএম

যুক্তরাষ্ট্রের জন্য খামেনির অঘোষিত শর্ত! 'ইসরাইলপ্রীতি ছাড়ুন, নয়তো আলোচনা নয়'"

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে একটি স্পষ্ট শর্ত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ওয়াশিংটন যদি সত্যিই ইরানের সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে চায়, তাহলে তাদের প্রথমেই ইসরাইলপ্রীতি এবং মধ্যপ্রাচ্যে অনধিকার হস্তক্ষেপের নীতি থেকে সরে আসতে হবে।

সোমবার তেহরানে এক অনুষ্ঠানে খামেনি যুক্তরাষ্ট্রকে এই স্পষ্ট বার্তা দেন। তিনি বলেন, "যুক্তরাষ্ট্র স্বভাবগতভাবেই আগ্রাসী এবং তারা কখনো আত্মসমর্পণ ছাড়া কিছু মেনে নেয় না। তবু আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতার সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দিচ্ছি না—তবে তাদের কিছু শর্ত মেনে চলতে হবে।" এই মন্তব্যের মাধ্যমে ইরান আবারও পরিষ্কার করে দিল যে, ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হলো ইসরাইলকে দেওয়া তাদের নিরবচ্ছিন্ন সমর্থন।

তেহরানে দেওয়া বক্তৃতায় খামেনি বলেন, "যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরাইলের প্রতি তাদের সমর্থন বন্ধ করে, মধ্যপ্রাচ্য থেকে তাদের সামরিক ঘাঁটি সরিয়ে নেয় এবং এই অঞ্চলের বিষয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করে—তবেই আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করব।" তার বক্তব্যে স্পষ্টই ফুটে উঠেছে ইরানের দীর্ঘদিনের এই অভিযোগ যে, ওয়াশিংটন মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিকে ইসরাইলের স্বার্থে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, যা আরও বাড়িয়ে তুলছে।

দীর্ঘদিনের টানাপোড়েনের ইতিহাস

ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের এই টানাপোড়েনের ইতিহাস বেশ দীর্ঘ। ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর দেশটিতে শাহ শাসনের পতন হয় এবং আয়াতুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে ইসলামিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে ওয়াশিংটন তেহরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। তখন থেকেই দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে, তবে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা ইস্যুতে পরোক্ষ বিরোধ চলে আসছে টানা চার দশক ধরে।

বিশেষ করে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি দুই দেশের মধ্যে বিরোধের মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বারবার অভিযোগ করেছে যে, ইরানের এই কর্মসূচির আড়ালে রয়েছে সামরিক উদ্দেশ্য—যা তেহরান জোরেশোরেই অস্বীকার করে আসছে। ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তি কিছুটা সম্পর্কের বরফ গলালেও, ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চুক্তি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত সম্পর্ককে আবারও তলানিতে নিয়ে যায়।

সম্প্রতিক উত্তেজনা

এই বছর জুন মাসেই ইরান, ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়। তেহরান অভিযোগ করে যে, ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে ইরানের বৈজ্ঞানিক স্থাপনা ও প্রতিরক্ষা কেন্দ্রগুলোতে সাইবার আক্রমণ চালিয়েছে। এই ঘটনার পর থেকে দুই দেশের সম্পর্কের তিক্ততা আরও বেড়েছে।

অন্যদিকে, ইরানের কর্মকর্তারা বারবার জানিয়েছেন যে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটানোর জন্য পরিচালিত হচ্ছে। তবে ওয়াশিংটন ও তেলআবিব সব সময়ই দাবি করে আসছে যে, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে এগোচ্ছে—যা ইসরাইলের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি।