ঢাকা, বুধবার, নভেম্বর ৫, ২০২৫ | ২০ কার্তিক ১৪৩২
Logo
logo

তালিকা সংশোধন নিয়ে আতঙ্কেই মৃত্যু? পশ্চিমবঙ্গে একদিনেই দু'জনের মৃত্যু, তৃণমূল-বিজেপি তর্কে উত্তাপ


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ০৪ নভেম্বর, ২০২৫, ০৩:১১ পিএম

তালিকা সংশোধন নিয়ে আতঙ্কেই মৃত্যু? পশ্চিমবঙ্গে একদিনেই দু'জনের মৃত্যু, তৃণমূল-বিজেপি তর্কে উত্তাপ

পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে তৈরি হওয়া আতঙ্ক আবারও মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াল। বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর নিয়ে তৈরি হওয়া এই উদ্বেগের জেরে হুগলির ডানকুনি ও পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরে একদিনেই দু'জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

ডানকুনির ৬০ বছর বয়সী হাসিনা বেগমের মৃত্যু নিয়ে সরগরম পুরো এলাকা। তিনি ডানকুনি পৌরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিলেন। রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, এসআইআর নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। তবে এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছে বিরোধী দল বিজেপি।

ডানকুনি পৌরসভার প্রধান হাসিনা সাবনাম এই প্রসঙ্গে বলেন, "হাসিনা বেগম বেশ কিছুদিন ধরে ভীষণ দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন। স্থানীয় মানুষদের কাছ থেকে শুনেছি, তিনি প্রায়ই জিজ্ঞেস করতেন, এসআইআর হলে কি তার নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাবে? এলাকার জনপ্রতিনিধিরা তাকে বারবার আশ্বস্ত করেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার থাকতে কারো নাম বাদ যাবে না।"

তিনি আরও জানান, হাসিনা বেগম ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তার নাম নেই জেনে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সোমবার সকালে হার্ট অ্যাটাকেই তার মৃত্যু হয়। পৌরপ্রধান দাবি করেন, এই মৃত্যুর জন্য সম্পূর্ণ দায়ী কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।

সোমবার সন্ধ্যায় হাসিনা বেগমের বাড়িতে গিয়েছিলেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জি। সেখানেও তিনি ওই নারীর মৃত্যুর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকেই দায়ী করেন।

অন্যদিকে, বিজেপির শ্রীরামপুর সংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, "তৃণমূল এখন লাশের রাজনীতি করছে। যেকোনো মানুষ মারা গেলেই তারা এসআইআর আতঙ্কের কার্ড খেলছে। যারা বৈধ ভোটার, তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণই নেই।"

একই দিনে পূর্ব মেদিনীপুরেও মৃত্যু

সোমবার একইভাবে এসআইআর আতঙ্কে পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরে শেখ সিরাজ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। রামনগর ১ ব্লকের কাঁটাবনি গ্রামের বাসিন্দা তিনি। এলাকাবাসীর দাবি, তার পূর্বপুরুষদের কেউই বাংলাদেশ বা অন্য কোনো বাইরের জায়গা থেকে আসেননি। সিরাজ উদ্দিন বহুদিন বিদেশে কাটিয়ে সম্প্রতি দেশে ফিরে দিঘায় একটি হোটেল দিয়েছেন। জানা গেছে, রবিবার কাজের কাগজপত্র বার করতে গিয়ে তিনি দেখেন তার বাবার নাম ভুলভাবে লেখা আছে। এরপর থেকেই তিনি গভীর চিন্তায় ডুবে যান। আর এই আতঙ্কেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বলে অভিযোগ।

কেন এত আতঙ্ক?

ভারতের নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গসহ দেশের ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিশেষ নিবিড় ভোটার তালিকা সংশোধন (এসআইআর) শুরু হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপে মঙ্গলবার থেকেই 'বুথ লেবেল অফিসার' বা বিএলওরা প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে এনুমারেশন ফর্ম বিতরণ করবেন। কয়েকটি ধাপে এই প্রক্রিয়া শেষে আগামী বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।

পশ্চিমবঙ্গে সর্বশেষ এসআইআর হয়েছিল ২০০২ সালে। নির্বাচন কমিশনের গাইডলাইন অনুযায়ী, একজন ভারতীয় ভোটারের জন্য ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এই প্রক্রিয়া শুরুর আগেই একাধিক মানুষের মনে গভীর আতঙ্ক কাজ করছে। অনেকেরই ধারণা, ২০০২-এর তালিকায় নাম না থাকলে তাকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হতে পারে বা বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে। তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, এই আতঙ্কের জেরে গত এক সপ্তাহে রাজ্যে মোট পাঁচটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

গত মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনার আগরপাড়ায় ৫৭ বছর বয়সী প্রদীপ করের মৃত্যুর মাধ্যমে এই সিরিজ শুরু হয়। এরপর বীরভূমের ইলামবাজারে ৯৫ বছর বয়সী ক্ষিতীশ মজুমদার, যার বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের কোতোয়ালিতে, তিনি মেয়ের বাসায় গিয়ে বিষপান করেন। তৃতীয় ঘটনাটি ঘটে পূর্ব বর্ধমানের নবগ্রামে বিমল সাঁতরার মৃত্যু নিয়ে। এছাড়াও কোচবিহারের দিনহাটায় ৬৩ বছর বয়সী খাইরুল শেখ নামে এক ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করেন।