এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ০৪ নভেম্বর, ২০২৫, ০৫:১১ পিএম

ইতালিতে বড় ধরনের আলোড়ন তৈরি করেছে এক কেলেঙ্কারি— যেখানে প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, কিংবদন্তি অভিনেত্রী সোফিয়া লরেন এবং জনপ্রিয় লেখিকা ফ্রানচেস্কা বারাসহ অসংখ্য প্রথম সারির নারীর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি নগ্ন ছবি প্রকাশিত হয়েছে এক পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইটে।
লেখিকা ফ্রানচেস্কা বারার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা
সম্প্রতি লেখিকা ও সাংবাদিক ফ্রানচেস্কা বারা নিজের নাম ও ছবি ব্যবহার করে তৈরি এমন একটি এআই-জেনারেটেড ফটো ওই ওয়েবসাইটে খুঁজে পান।
বারা জানান, বিষয়টি জানার পর তার কনিষ্ঠ মেয়ে তাকে জিজ্ঞেস করেছিল,
“তুমি কেমন অনুভব করছ?”
তিনি বুঝতে পারেন, মেয়ে আসলে জানতে চেয়েছিল— “যদি আমার সঙ্গে এমন হতো, আমি কীভাবে বাঁচতাম?”
এই প্রশ্নই বারাকে নাড়িয়ে দেয়।
৭ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবারের সাইটে ভয়াবহ কনটেন্ট
ওয়েবসাইটটির নাম ‘সোশ্যাল মিডিয়া গার্লস’, যেখানে ৭ মিলিয়নেরও বেশি সাবস্ক্রাইবার রয়েছে। সাইটটিতে ‘ইতালিয়ান নগ্ন সেলিব্রিটি’ নামে একটি বিশেষ সেকশন আছে।
এর আগেও ‘মিয়া মগলিয়ে’ নামের ফেসবুক গ্রুপ এবং ‘ফিকা’ নামের আরেক ওয়েবসাইটে শতাধিক ইতালিয়ান নারীর পরিবর্তিত ছবি অবমাননাকর ভাষায় প্রকাশিত হয়েছিল।
ফ্রানচেস্কা বারার আইনি লড়াই
বারা বর্তমানে ইতালির রেটে-৪ চ্যানেলের রাজনৈতিক শো পরিচালনা করেন। তিনিই প্রথম ইতালীয় নারী, যিনি ‘সোশ্যাল মিডিয়া গার্লস’-এর বিরুদ্ধে আইনি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ওই সাইটে তার পাশাপাশি সোফিয়া লরেনসহ আরও কয়েকজন পরিচিত নারীর কৃত্রিম ছবি প্রকাশিত হয়েছিল।
তার আইনি পরামর্শ দিচ্ছে আনামারিয়া বারানারডিনি ডে পেস ফার্ম।
আইনজীবী ডানিয়েলা কাপুটো জানান, অনেক তরুণী মামলা করতে ভয় পাচ্ছেন — সুনাম, চাকরি ও ভবিষ্যৎ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায়।
অধিকাংশ ভুক্তভোগীর অর্থনৈতিক সামর্থ্যও সীমিত, তাই দীর্ঘ আইনি লড়াই চালানো কঠিন।
🇮🇹 ইতালির নতুন আইন ও কঠোর শাস্তি
ইতালি সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে প্রথম দেশ হিসেবে এআই নিয়ন্ত্রণে বিস্তৃত আইন পাস করেছে।
এই আইনে ভুয়া বা ক্ষতিকর এআই কনটেন্ট ছড়ালে কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
তবে আইনজীবী কাপুটোর মতে, এখনো একটি বড় সমস্যা রয়ে গেছে —
“যেসব প্ল্যাটফর্মে এই ছবি ছড়ায়, সেগুলোর বেশিরভাগই বিদেশি, তাই তাদের সনাক্ত করা কঠিন।”
পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর হতে পারে” — সতর্ক করলেন বারা
ফ্রানচেস্কা বারা বলেন,
“সব রাজনৈতিক নেতাকে একসঙ্গে পরিকল্পনা নিতে হবে। এই সংকট এখনই থামাতে হবে, না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।”
তিনি ২০১৩ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সী ক্যারোলিনা পিচিওর আত্মহত্যার উদাহরণ টেনে বলেন,
“যেমন তার ভিডিও ফাঁস হয়ে সে নিজের প্রাণ দেয়, ঠিক তেমনি এই ডিজিটাল অপরাধগুলোও হতে পারে প্রাণঘাতী।”