এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ০৪ নভেম্বর, ২০২৫, ০৫:১১ পিএম

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিমানবন্দরগুলোতে চলছে তীব্র বিশৃঙ্খলা। দেশটির প্রধান প্রধান বিমানবন্দরগুলোতে শত শত ফ্লাইট বাতিল আর হাজার হাজার ফ্লাইটের সময় পিছিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এই বিশৃঙ্খলার মূল কারণ হলো, বিপুল সংখ্যক এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার তাদের কাজে উপস্থিত হচ্ছেন না। দেশটির ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) জানিয়েছে, সরকারি শাটডাউনের কারণে বেতন না পাওয়ায় তাদের এই অনুপস্থিতি দিন দিন বেড়েই চলেছে।
এই অবস্থার জেরে গত কয়েক দিনে দেশজুড়ে ৩২ লাখেরও বেশি যাত্রী তাদের ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্বের শিকার হয়েছেন। রয়টার্সের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধু গত শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত এই সপ্তাহান্তে ১৬ হাজার ৭০০টিরও বেশি ফ্লাইটের সময় পিছিয়েছে এবং ২ হাজার ২৮২টির বেশি ফ্লাইট পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে। সোমবারও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটঅ্যাওয়্যারের তথ্য বলছে, সোমবার শিকাগোর ও'হেয়ার, ডালাস ফোর্ট ওয়ার্থ, ডেনভার এবং নিউয়ার্কের মতো বড় বড় শহরের বিমানবন্দরগুলোতে প্রায় ৪ হাজার ফ্লাইট সময়ে ছাড়তে পারেনি এবং ৬০০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়ে গেছে।
এফএএ স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, সরকারের এই অচলাবস্থার কারণে দেশের ৩০টি বড় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সেন্টারের অর্ধেকেই এখন মারাত্মক কর্মী সংকট দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা নিউইয়র্ক অঞ্চলের বিমানবন্দরগুলোতে, সেখানে কর্মী অনুপস্থিতির হার চড়চড় করে বেড়ে ৮০ শতাংশে পৌঁছে গেছে!
বর্তমান শাটডাউনের কারণে প্রায় ১৩ হাজার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার এবং ৫০ হাজার ট্রান্সপোর্টেশন সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (টিএসএ) কর্মী এক টাকাও বেতন ছাড়াই কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী বিমানবন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
এফএএ সরাসরি বলে দিয়েছে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে কন্ট্রোলারদের অনুপস্থিতি হু হু করে বেড়ে যাওয়ায়, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা এখন বিমান চলাচলের সংখ্যা জোর করে কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
সংস্থাটি একটি বিবৃতিতে সতর্ক করে দিয়ে বলে, "যতক্ষণ না এই সরকারি অচলাবস্থার সমাধান হচ্ছে, ততক্ষণ এটিসি কর্মকর্তারা তাদের প্রাপ্য বেতন পাবেন না এবং যাত্রীদের আরও বেশি বেশি করে ফ্লাইট বিলম্ব ও বাতিলের মুখোমুখি হতে হবে। নিরাপত্তা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার, তাই প্রয়োজন হলে আমরা বিমান চলাচল সীমিত করব, যার ফলে আরও ফ্লাইট বিলম্ব বা বাতিল হতে পারে।"
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফি গত রোববার সিবিএস নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই সংকটের কথা স্বীকার করে নেন। তিনি বলেন, "নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফ্লাইট চলাচলে বিলম্ব অব্যাহত থাকবে। আমরা ওভারটাইম কাজ করছি যাতে পুরো সিস্টেমটি নিরাপদ থাকে। প্রয়োজনে ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্বিত হবে।"
তিনি আরও যোগ করেন, "এমনও কিছু এটিসি কর্মকর্তা আছেন যারা সংসার চালানোর তাগিদে অন্য কাজ খুঁজছেন। কিন্তু আমরা তাদের কাউকেই বরখাস্ত করব না। যখন কেউ তার পরিবারের ভরণপোষণের জন্য দ্বিতীয় কোনো কাজ করার কথা ভাবছেন, তখন আমি তাকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করার কথা ভাবতেই পারি না।"
এদিকে, মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রে এই সরকারি শাটডাউন টানা ৩৫তম দিনে পা দিয়েছে। এটি ২০১৮-২০১৯ সালের শাটডাউনের সমান দীর্ঘ হয়েছে এবং দেশটির ইতিহাসেই এটি এখন সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলা শাটডাউনে পরিণত হয়েছে।
এই দীর্ঘস্থায়ী অচলাবস্থার ফলে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬ লাখ ৭০ হাজার ফেডারেল কর্মী বাধ্যতামূলক ছুটিতে আছেন এবং প্রায় ৭ লাখ ৩০ হাজার কর্মী কোনো রকম বেতন ছাড়াই তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।