ঢাকা, বুধবার, নভেম্বর ৫, ২০২৫ | ২১ কার্তিক ১৪৩২
Logo
logo

শার্ম-আশ-শেখে হাসি, গাজায় বোমা! ফিলিস্তিনিদের কান্না কি কেউ শোনে?


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ০৫ নভেম্বর, ২০২৫, ০৪:১১ পিএম

শার্ম-আশ-শেখে হাসি, গাজায় বোমা! ফিলিস্তিনিদের কান্না কি কেউ শোনে?

গাজায় কোনো রাতই শান্ত নয়। যুদ্ধবিরতির আগেও না, শার্ম-আশ-শেখ শান্তি ঘোষণার পরেও না। মিডল ইস্ট আই-এ লাবনা মাসারোয়ার একটা লেখা বেরিয়েছে। তিনি লিখেছেন, মিশরের সমুদ্রতীরের রিসোর্ট শার্ম-আশ-শেখে যখন বিশ্বনেতারা হাসছেন আর গাজায় যুদ্ধ শেষের কথা বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে করমর্দন করছেন, তখনই ইসরাইলি সেনা গাজায় থেমে থেমে বোমা ফেলে যাচ্ছে—যেন নিশ্বাস নেওয়ারও ফুরসত দিচ্ছে না।

যুদ্ধবিরতির মাত্র একদিন পরেই ইসরাইল ১০৪ জনের বেশি ফিলিস্তিনি সাধারণ মানুষকে মেরে ফেলেছে। এর মধ্যে ৪৬ জন শিশু আর একই পরিবারের ১৮ জন সদস্য। অনেকের নামই ছিল না; তারা চুপচাপ, বেনামে শহীদ হয়ে গেছে।

বিশ্বের চোখে ফিলিস্তিনিরা আর মানুষ নয়। তারা আবেগহীন, অতীতহীন, গল্পহীন আর ভবিষ্যৎহীন জীব। ইসরাইলি মিডিয়া তাদের বন্দীদের জীবন নিয়ে বিস্তারিত বলে—প্রিয় খাবার থেকে পরিবারে ফেরার মুহূর্ত পর্যন্ত। কিন্তু গাজার শহীদ শিশুদের জন্য কেউ একফোঁটা চোখের জল ফেলে না।

যুদ্ধবিরতির দিন ইসরাইলি টিভিতে একটা দৃশ্য দেখানো হয়। এক ইসরাইলি বন্দীর স্ত্রী পাঁচ বছরের ছেলেকে জাগিয়ে বলছেন, বাবা ফিরে এসেছে। উপস্থাপকদের চোখে জল। কিন্তু সেই একই দিনে ইসরাইলি সেনা পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি বন্দীদের বাড়িতে হানা দেয়—যারা মুক্তি পেতে চলেছে। পরিবারকে হুমকি: মুক্তি পেলেও উৎসব করার অধিকার নেই।

এক ফিলিস্তিনি বন্দীর মেয়ে রাজান বলে, “সৈন্যরা বাড়িতে ঢুকে হুমকি দিয়েছে, কাউকে বাবাকে অভিনন্দন জানাতে দেয়নি!” ওই হানায় এক যুবক আহত, আরও অনেককে পেটানো হয়।

গাজায় মুক্ত বন্দী হাইসাম সালেম জেল থেকে বেরিয়ে জানতে পারেন, তার স্ত্রী আর তিন সন্তান ইসরাইলি হামলায় শহীদ। হাসপাতালে চিৎকার করে বলেন, “আমার বাচ্চারা কি বেঁচে? না... মরে গেছে। আমার মেয়ের জন্মদিন চার দিন পর।” জেলে মেয়ের জন্য হাতে বানানো ব্রেসলেট তুলে বলেন, “এটা তার জন্য বানিয়েছি, নিজের হাতে।”
সেই মেয়েটির বয়স ঠিক ওই ইসরাইলি বন্দীর ছেলের সমান, যার জন্মদিন কয়েকদিন আগে উদযাপন হয়েছে। কিন্তু সালেমের জন্য কেউ চোখের পানি ফেলেনি, মুক্তিকে স্বাগতও জানায়নি।

ইসরাইল যখন “আত্মরক্ষার অধিকার” নিয়ে কথা বলে, তখন গাজা-পশ্চিম তীরের মানুষকে কেউ রক্ষা করে না। ২০,০০০ শিশুসহ ৬৮,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি মরলেও বিশ্ব নড়ে না।
এক রাতে ইসরাইলি বোমা শত শত জীবন কেড়ে নিতে পারে। হামলার আগে শুধু আমেরিকাকে খবর দেয়, পরদিন শিশুদের লাশ দাফনের আগেই আবার “যুদ্ধবিরতি” ঘোষণা।

শার্ম-আশ-শেখ চুক্তিতে সই করা সরকারগুলো ফিলিস্তিনিদের বলে, স্বাধীনতা পেতে হলে আলোচনা করো, প্রতিরোধ নয়। কিন্তু ইসরাইল দেখিয়েছে, কোনো চুক্তি মানবে না।

“যুদ্ধোত্তর” নতুন মডেল তৈরি হচ্ছে—ইসরাইলের পরিকল্পনা, আরব-মুসলিম নেতাদের সমর্থন। ট্রাম্পের সঙ্গে হাসিমুখে করমর্দন। এই মডেলে “প্রতিরক্ষার অধিকার” বদলে “জানার অধিকার” হয়ে গেছে—মানে ইসরাইল যখন ইচ্ছে ফিলিস্তিনিদের মারার চিরকালীন লাইসেন্স।