ঢাকা, বুধবার, নভেম্বর ৫, ২০২৫ | ২১ কার্তিক ১৪৩২
Logo
logo

বাংলা বলে ভোট জিতলেন! মা মীরা নায়ারের টানে জোহরানের বাঙালি প্রেম ফাঁস


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ০৫ নভেম্বর, ২০২৫, ০৪:১১ পিএম

বাংলা বলে ভোট জিতলেন! মা মীরা নায়ারের টানে জোহরানের বাঙালি প্রেম ফাঁস

জোহরান মামদানি—৩৪ বছরের এই যুবক নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনের ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে চমক দেখিয়েছেন। শুধু আমেরিকান রাজনীতিতে নয়, দক্ষিণ এশীয়দের মাঝেও হইচই ফেলে দিয়েছেন। এবার প্রতিদ্বন্দ্বীকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবে ইতিহাস গড়লেন।

গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক এই নেতা হেভিওয়েট অ্যান্ড্রু কুমোকে ধরাশায়ী করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ভোটের মাঠে তাঁর প্রচারের একটা জিনিস সবচেয়ে নজর কেড়েছে—তাঁর ‘বাংলা প্রীতি’।
জোহরান ক্যাম্পেইন শুরুতেই বিভিন্ন ভাষা ব্যবহার করেছেন, তার মধ্যে বাংলা ছিল অন্যতম। নিউইয়র্কের বাংলাদেশি এলাকা লিটল বাংলাদেশ কেনসিংটনে স্থানীয় কাউন্সিল মেম্বার শাহানা আরিফের সঙ্গে একটা স্পেশাল প্রচার ভিডিও বানান।

এই ভিডিওতে একটা দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। মামদানি বাঙালির ঐতিহ্যের মিষ্টির প্লেট সামনে নিয়ে ভাঙা ভাঙা বাংলায় ‘র‍্যাংকড চয়েস ভোটিং’ বোঝাচ্ছেন। শেষে নিজের বাংলা নিয়ে প্রশ্ন, ‘আমার বাংলা ভালোই, না?’ শাহানা আরিফের উত্তর, ‘খারাপ না!’ এই মজার কথায় ভোটারদের মনে বন্ধুত্বের উষ্ণতা ছড়িয়ে দিয়েছে।
ভারতীয় বংশের এই নেতা হিন্দি-উর্দুর পাশাপাশি বাংলায় মোটামুটি কথা বলতে পারেন। জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশি এলাকায় অনেকে মুগ্ধ। প্রচারে বেরিয়ে বাঙালি দোকানদারদের সঙ্গে বাংলায় ছোট্ট আলাপ করতেও দেখা গেছে।

প্রাইমারি জয়ের ‘অ্যাকসেপ্টেন্স স্পিচ’-এও বাঙালি সমাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি। ‘বাংলাদেশি আন্টি’দের ভূমিকা বিশেষ করে বলেছেন। জয়ের পর বারবার বাঙালি এলাকায় গেছেন। হিলসাইড অ্যাভিনিউতে গমগম করেছে, ‘আমার মেয়র, তোমার মেয়র, মামদানি, মামদানি, জোহরান মামদানি!’
অনেকের মনে প্রশ্ন—ভোটের জন্যই কি এই বাংলা-ভালোবাসা, নাকি অন্য কারণ?
সংক্ষেপে বলি, জোহরানের বাংলা যোগের পেছনে সবচেয়ে বড় হাত তাঁর মা মীরা নায়ারের। বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক তিনি।

মীরা নায়ারের জন্ম ওডিশার বাঙালি শহর রাউরকেল্লায়। বেড়ে ওঠা ভুবনেশ্বরে, যেখানে অনেক বাঙালি। শৈশবে বাঙালি বন্ধু, গানের গুরু বাঙালি। তাই মীরা বাংলা বোঝেন, কিছুটা বলতেও পারেন।
তাঁর বিখ্যাত ছবি ‘নেমসেক’। ঝুম্পা লাহিড়ির উপন্যাস অবলম্বনে। গল্প আমেরিকায় আসা প্রথম প্রজন্মের বাঙালি দম্পতি অশোক-অসীমা গাঙ্গুলির।

মজার কথা, ‘নেমসেক’ বানাতে জোহরানই মাকে উৎসাহ দিয়েছিলেন। ২০০৭-এ মীরা হ্যারি পটারের পঞ্চম পর্ব পরিচালনার অফার পান। দ্বিধায় পড়ে ছেলের কাছে যান। তখন জোহরানের বয়স ১৪, হ্যারি পটারের ফ্যান। তবু বলেন, ‘অনেক পরিচালক হ্যারি পটার বানাতে পারবেন—কিন্তু নেমসেক শুধু তুমি!’ ছেলের কথায় মীরা বাঙালি অভিবাসীদের গল্প নিয়ে ছবি বানান। বাঙালির হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে।

জোহরানরা দক্ষিণ এশীয় বাবা-মায়ের সন্তান, আমেরিকায় দ্বিতীয় প্রজন্ম। পরিচয়ের সংকটে ‘এবিসিডি’—আমেরিকা বর্ন কনফিউজড দিশি। ‘নেমসেক’-এর গোগলও তাই।

সমাবেশে জোহরান বলেছেন, ‘যাদের সন্ত্রাসী বলা হয়, নাম বিকৃত শোনেন—হাত তুলুন। পরিচয়ের জন্য হেয় হওয়া আমাদের সবার লড়াই।’

কিন্তু জোহরান প্রমাণ করেছেন, ‘এবিসিডি’ হলেও তাঁর চিন্তায় কোনো বিভ্রান্তি নেই। টিম ইংরেজির সঙ্গে হিন্দি, উর্দু, বাংলায় ভিডিও বানিয়েছে। কোনোটায় বলিউডের ‘দিওয়ার’ থিম। ‘মেরে পাস মা হ্যায়’-এর মতো জোহরান যেন বলছেন—তাঁর সঙ্গে মা আছেন।