এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ০৫ নভেম্বর, ২০২৫, ১০:১১ পিএম

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পারমাণবিক শক্তিচালিত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ‘বুরেভেসতনিক’ এবং সুপার টর্পেডো ‘পোসেইডন’-এর নির্মাতাদের রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে সম্মানিত করেছেন। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, ক্রেমলিনের এই পদক্ষেপ আদতে ইউক্রেনকে সমর্থন করা থেকে পশ্চিমাদের নিরুৎসাহিত করার রুশ প্রচেষ্টার সর্বশেষ ইঙ্গিত। খবর সিএনএনের।
বুরেভেসতনিক-পোসেইডন: ‘একুশ শতকের জন্য ঐতিহাসিক গুরুত্ব’
মঙ্গলবার ক্রেমলিনে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে পুতিন দাবি করেন, ‘পোসেইডন’ সুপার টর্পেডো এবং ‘বুরেভেসতনিক’ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের মতো পারমাণবিক-সক্ষম অস্ত্রগুলো কেবল বর্তমানের জন্য নয়, বরং পুরো একবিংশ শতাব্দীর জন্য রাশিয়ার জন্য কৌশলগত ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির অগ্রগতির প্রশংসা করে পুতিন বলেন, “ওড়ার ক্ষমতার দিক থেকে বুরেভেসতনিক বিশ্বের পরিচিত সব দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাকে ছাড়িয়ে গেছে।”
রুশ প্রেসিডেন্ট আরও দাবি করেন, এই অনন্য অস্ত্রগুলো পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের কাছে নেই এবং এগুলো যেকোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে সক্ষম।
আরেকটি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের উৎপাদন শুরু
পুতিন আরও জানান, রাশিয়া আরেকটি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘ওরেশনিকের’ ধারাবাহিক উৎপাদন শুরু করেছে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে ইউক্রেনের ডিনিপ্রোতে অঞ্চলে এক হামলায় রাশিয়া এই ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল, যা ইতিহাসে কোনো যুদ্ধে মধ্যম-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম হামলা।
tensions মস্কো-ওয়াশিংটন উত্তেজনা**
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে পুতিনের গড়িমসির কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মাসে রাশিয়ার শীর্ষ দুটি তেল কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং হাঙ্গেরিতে পুতিনের সঙ্গে প্রস্তাবিত বৈঠক বাতিল করার পর, মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই এই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হলো।
ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার কয়েকদিন পর, গত ২৬ অক্টোবর পুতিন ঘোষণা করেন যে, রাশিয়া বুরেভেসতনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। ক্রেমলিন কর্তৃক প্রকাশিত একটি ভিডিওতে, সামরিক পোশাক পরা পুতিনকে রুশ সামরিক বাহিনীর প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেখা যায়। ওই বৈঠকে গেরাসিমভ জানান, বুরেভেসতনিক ১৪ হাজার কিলোমিটার (৮ হাজার ৭০০ মাইল) দূরত্ব অতিক্রম করেছে এবং প্রায় ১৫ ঘণ্টা ধরে আকাশে ছিল।
এর ঠিক দুইদিন পর, গত ২৮ অক্টোবর পুতিন দাবি করেন, সুপার টর্পেডো ‘পোসেইডন’-এরও সফল পরীক্ষা চালিয়েছে রাশিয়া।
🇺🇸 যুক্তরাষ্ট্রকে ভয় দেখানোই লক্ষ্য?
পারমাণবিক শক্তি চালিত এই দুটি অস্ত্র (বুরেভেসতনিক ও পোসেইডন) নতুন কিছু নয়। পুতিন ২০১৮ সালেই দুটি অস্ত্র উন্মোচন করেছিলেন। এমনকি বুরেভেসতনিকের সফল পরীক্ষার কথা ২০২৩ সালেই ঘোষণা করেছিলেন।
তবে সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, 'রাশিয়া পুরনো ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির নতুন পরীক্ষা চালিয়ে পশ্চিমা বিশ্বে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন পারমাণবিক হুমকি পাঠাচ্ছে।'
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (সিএসআইএস) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "ক্ষেপণাস্ত্রের দূরত্বের ক্ষমতার উপর বারবার জোর দেওয়া এবং যেকোনো ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভাঙার ক্ষমতার উপর জোর দেওয়া ইঙ্গিত দেয় যে, লক্ষ্যবস্তু হবে যুক্তরাষ্ট্র; কোনো আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ নয়..."
প্রতিবেদনে বিদেশি হামলা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষা করার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের ‘গোল্ডেন ডোম’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরির পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করা হয়। পুতিন সরাসরি গোল্ডেন ডোমের নাম উল্লেখ না করলেও, বিশ্বের যেকোনো ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উড়িয়ে দিতে বুরেভেসতনিকের সক্ষমতার প্রশংসা করেছেন।
সিএসআইএস-এর মতে, “পুতিন দূরপাল্লার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে ভয় দেখাতে চাইছেন, যাতে করে মার্কিন সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের রাশিয়ার স্বার্থের জন্য হুমকিমূলক নীতি অনুসরণ করতে নিরুৎসাহিত করা যায়।”
ট্রাম্প মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার নির্দেশ দেওয়ার কয়েকদিন পরই এই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটি হলো।
মঙ্গলবার পুতিন তার ভাষণে দাবি করেন, রাশিয়া 'কাউকে হুমকি দিচ্ছে না'। তিনি বলেন, “অন্যান্য সব পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মতো রাশিয়াও তার পারমাণবিক সক্ষমতা ও কৌশলগত সক্ষমতা বিকাশ করছে। আমরা এখন যা কিছু করছি তা অনেক আগেই ঘোষণা করা কাজের ধারাবাহিকতা।”