এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ০৬ নভেম্বর, ২০২৫, ০৪:১১ পিএম

সুদানের ফাশির শহরে চলছে নরকীয় তাণ্ডব। একের পর এক নৃশংস হত্যাকাণ্ডে এখন আলোচনায় এক নাম—আবু লুলু, যাকে স্থানীয়রা ডাকছে “ফাশিরের কসাই” বলে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ) নামের সশস্ত্র দল বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ভয়াবহ হামলা চালাচ্ছে। এদের মধ্যেই আবু লুলু তার অপরাধের ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করে নিজেকে ‘নায়ক’ হিসেবে উপস্থাপন করেছে।
সংবাদমাধ্যম পার্সটুডে জানায়, বিশ্ব যখন গাজা যুদ্ধবিরতির দিকে মনোযোগী, ঠিক তখনই আমিরাত-সমর্থিত আরএসএফ সুদানে চালাচ্ছে বৃহত্তম গণহত্যা, যা আন্তর্জাতিকভাবে গোপন রাখা যায়নি।
ফাশিরে নৃশংস গণহত্যা: কয়েকদিনে নিহত ২,০০০ এর বেশি মানুষ
গত সপ্তাহে আরএসএফ দাবি করে, ৫০০ দিনের অবরোধের পর তারা উত্তর দারফুরের ফাশির শহর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এরপরই শুরু হয় হত্যাযজ্ঞ—বিশেষ করে নারী ও শিশুদের ওপর।
প্রাথমিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই ২,০০০ এর বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। শহরজুড়ে মৃতদেহের স্তূপ আর রক্তে ভরা গর্তে ভরে গেছে ফাশিরের রাস্তাঘাট।
কে এই ‘ফাশিরের কসাই’?
আবু লুলুর আসল নাম ফাতিহ আবদুল্লাহ ইদ্রিস। কয়েক মাস আগেও তার নাম কেউ জানত না। কিন্তু ফাশিরে হত্যাযজ্ঞ শুরু হওয়ার পরই তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন নৃশংসতা ও আতঙ্কের প্রতীক হিসেবে।
আরএসএফ দাবি করেছে, তারা আবু লুলুর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখে না এবং পরবর্তীতে তাকে গ্রেপ্তার করে “শেলা” কারাগারে রেখেছে। কিন্তু তার প্রকাশিত ভিডিও ও অডিও প্রমাণ দেখাচ্ছে, তিনি আরএসএফ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতেন।
একটি অডিও ফাইলে আবু লুলু নিজেই গর্ব করে বলেন—তিনি এক হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছেন।
ফাশিরে মানবিক বিপর্যয়: ক্ষুধা, মৃত্যু আর নিস্তব্ধতা
জাতিসংঘের মানবিক সংস্থাগুলোকে শহরে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে। ফলে ফাশির এখন এক মৃত শহরে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, শহরে আটকে থাকা হাজারো মানুষ পানীয় জল, খাবার এবং চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত।
সুদানিজ ডক্টরস নেটওয়ার্ক জানায়, আরএসএফ সাধারণ মানুষকে শহর ছাড়তে বাধা দিচ্ছে এবং পালানোর চেষ্টাকারীদের হুমকি দিচ্ছে।
ফলে হাজার হাজার মানুষ খোলা আকাশের নিচে আশ্রয়হীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। অনেকেই ক্ষুধায় গাছের পাতা খেতে বাধ্য হচ্ছে।
বিশ্বের নীরবতা, আর ফাশিরের মানুষ মৃত্যুর মুখে
একজন পালিয়ে আসা সাংবাদিক জানান, “গুদাম পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, বাজার লুট হয়েছে, হাসপাতাল ধ্বংস করা হয়েছে। এখন শহরে শুধু মৃত্যু আর নিস্তব্ধতা।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, আবু লুলুর মতো ব্যক্তিদের উত্থান দেখিয়ে দিচ্ছে—সুদানে এখন মানবতার কোনো স্থান নেই। সন্ত্রাসীরা তাদের অপরাধের ভিডিও গর্ব করে প্রকাশ করছে, আর বিশ্ব তাকিয়ে আছে নির্বিকারভাবে।