ঢাকা, শুক্রবার, নভেম্বর ৭, ২০২৫ | ২৩ কার্তিক ১৪৩২
Logo
logo

মুজাদ্দিদে আলফে সানির দরগাহ: ভেদাভেদ ভুলে একত্রে আহারের অনন্য আধ্যাত্মিক মিলনস্থল


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ০৭ নভেম্বর, ২০২৫, ০১:১১ পিএম

মুজাদ্দিদে আলফে সানির দরগাহ: ভেদাভেদ ভুলে একত্রে আহারের অনন্য আধ্যাত্মিক মিলনস্থল

ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের শান্ত শহর সারহিন্দ—যেখানে ইতিহাস, আধ্যাত্মিকতা আর মানবতার এক অনন্য মেলবন্ধন। এখানেই বিশ্রাম নিচ্ছেন ইসলামের নবজাগরণের মহান পুরোধা, ইমামে রব্বানি মুজাদ্দিদে আলফে সানি, হজরত শায়েখ আহমাদ সারহিন্দি (রহ.)।

ষোড়শ শতকের শেষভাগে যখন সম্রাট আকবরের দ্বীনে এলাহি মুসলমানদের বিভ্রান্ত করেছিল, তখন এই মহান আলেম কলম ও আধ্যাত্মিক শক্তি দিয়ে মানুষকে ফিরিয়ে আনেন তাওহিদের সঠিক পথে। তাঁর সেই বিপ্লবী ভূমিকার কারণেই ইতিহাস তাঁকে ডাকে “দ্বিতীয় সহস্রাব্দের সংস্কারক” নামে।

ইতিহাস ও প্রশান্তির এক নিবিড় মিলন

সারহিন্দের প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে গেলেই চোখে পড়ে মুজাদ্দিদে আলফে সানির দরগাহ কমপ্লেক্স। এটি শুধু একটি দরগাহ নয়—বরং ইতিহাস, ধর্মীয় চেতনা ও মানবতার এক মিলনক্ষেত্র।

ভেতরে ঢুকতেই পেরোতে হয় এক বিশাল ফটক। তার পরই যেন শহরের কোলাহল মুছে গিয়ে মিশে যায় অদ্ভুত এক প্রশান্তিতে। সাদা মার্বেলের পথ, চারপাশে সবুজ গাছপালা, মাথার ওপর উজ্জ্বল সাদা গম্বুজ—সব মিলিয়ে এক নীরব সৌন্দর্যের পরশ মেলে এখানে।

রাতে আকাশের তারা আর দরগাহের আলো এক হয়ে তৈরি করে এক অপার্থিব দৃশ্য। ভিতরের আঙিনায় ভেসে আসে পবিত্র কোরআনের তিলাওয়াতের সুমধুর ধ্বনি। পাশেই রয়েছে কোরআনি মারকাজ, যেখানে ছোট ছোট শিশু কোরআন শেখে। তাদের নিষ্পাপ মুখে কোরআন পাঠের দৃশ্য দেখে মন ভরে যায় আগন্তুকদের।

লঙ্গরখানায় ভেদাভেদহীন ভোজ

দরগাহের পূর্ব পাশে রয়েছে এক বিশাল লঙ্গরখানা, যা এই পবিত্র স্থানের অন্যতম আকর্ষণ। প্রতিদিন শত শত মানুষ এখানে একসঙ্গে আহার করেন। রুটি, খিচুড়ি, ডাল, সবজি ও গোশতের নানা পদ রান্না হয় সবার জন্য।

এখানে নেই ধনী-গরিব, মুসলিম-অমুসলিমের কোনো পার্থক্য। সবাই এক সারিতে বসে খায়, কেউ খাবার পরিবেশন করছে, কেউ থালা ধুচ্ছে—সবাই সমান। সাধারণ খাবার হলেও পরিপূর্ণতায় ভরে ওঠে মন ও আত্মা।

শান্তি ও সহাবস্থানের প্রতীক সারহিন্দ

দরগাহ কমপ্লেক্সের পাশেই রয়েছে এক সুবিশাল গুরুদ্বারা, যা শিখ ধর্মাবলম্বীদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র স্থান। দরগাহ ও গুরুদ্বারা—দুটি ধর্মীয় স্থাপনা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে যেন ঘোষণা করছে শান্তি, সহাবস্থান ও সম্প্রীতির অটুট বার্তা।

একদিকে আজানের সুর, অন্যদিকে গুরুবাণীর কীর্তন—তবু নেই কোনো দ্বন্দ্ব, নেই ঘৃণা। বরং একসঙ্গে সহাবস্থানের এই দৃশ্য সারহিন্দকে করেছে মানবতার এক জীবন্ত প্রতীক।

মুজাদ্দিদে আলফে সানির উত্তরাধিকার

শায়েখ আহমাদ সারহিন্দি (রহ.) আজও কোটি মানুষের হৃদয়ে বেঁচে আছেন। তাঁর দরগাহ কেবল একটি সমাধি নয়—এটি বিশ্বাস, শিক্ষা ও আত্মার পরিশুদ্ধতার কেন্দ্র।

মানুষ এখানে আসে অনুপ্রেরণা নিতে, আত্মার শান্তি খুঁজতে এবং ইতিহাসের এক সোনালি অধ্যায়কে ছুঁয়ে দেখতে। সারহিন্দ যেন নীরবে মনে করিয়ে দেয়—যে ব্যক্তি সত্যের পক্ষে অটল থাকে, ইতিহাস একদিন শ্রদ্ধাভরে উচ্চারণ করে তার নাম।