এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ০৮ নভেম্বর, ২০২৫, ০৪:১১ পিএম

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নৃশংসতার দায় এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাঁধে চাপালেন শেখ হাসিনা। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি ভারতের ইংরেজি দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমস-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন— “সহিংসতা মোকাবিলায় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কিছু সদস্য অবশ্যই ভুল করেছেন।”
গত বৃহস্পতিবার ভারতের আরও কয়েকটি শীর্ষ সংবাদমাধ্যম— দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও আনন্দবাজার পত্রিকা—ও শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে। তারা দাবি করেছে, ই-মেইলের মাধ্যমে প্রশ্ন পাঠানো হয় এবং শেখ হাসিনা লিখিতভাবে জবাব দেন। তবে কীভাবে সেই যোগাযোগের ই-মেইল ঠিকানা পাওয়া গেছে, তা স্পষ্ট করেনি কোনো সংবাদমাধ্যম।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা এবার প্রথমবারের মতো “দোষ স্বীকার” করেছেন। পত্রিকাটি লিখেছে— “রাজনৈতিক নেতৃত্বও দায়ী”, বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের সময় সহিংসতার ঘটনায় শেখ হাসিনা নিজের দায়িত্ব এড়াননি।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) বিচারের মুখোমুখি শেখ হাসিনা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের সময় তার নির্দেশেই নিরস্ত্র ছাত্র ও সাধারণ মানুষের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। আদালতে এর প্রমাণও হাজির করা হয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ৩৬ দিনের আন্দোলনে অন্তত ১,৪০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে হাসিনা বলেন,
“নিরাপত্তা বাহিনীর পদক্ষেপে যে প্রাণহানি ঘটেছে, তাতে আমি কোনোভাবে জড়িত নই। এই অভিযোগগুলো রাজনৈতিকভাবে প্রণোদিত—একটি অনির্বাচিত সরকার তাদের প্রতিপক্ষকে নিশ্চুপ করতে চায়।”
তিনি আরও বলেন,
“মাঠ পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজকে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি নির্দেশ হিসেবে দেখা সম্পূর্ণ ভুল। আমি মিনিটে মিনিটে নির্দেশ দিচ্ছিলাম—এমন দাবি বাস্তবতার সঙ্গে যায় না। আমি কখনও জনতার ওপর গুলি চালানোর অনুমতি দিইনি।”
গত গ্রীষ্মের বিক্ষোভের প্রসঙ্গ টেনে হাসিনা বলেন,
“প্রতিটি প্রাণহানিতে আমি গভীরভাবে অনুতপ্ত। তখন ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছিল, সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল। আমাদের লক্ষ্য ছিল প্রাণহানি কমানো এবং সংবিধান রক্ষা করা।”
আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে তিনি বলেন,
“আমার দল কখনও অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেনি। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো ও জনপ্রিয় দল। যদি এই দলকে রাজনীতি থেকে বাদ দেওয়া হয়, তাহলে গণতন্ত্রের কোনো আশা থাকে না।”
তার মতে, “এই নিষেধাজ্ঞা ১৭ কোটি মানুষের মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘন। যদি জনগণ তাদের পছন্দের দলকে ভোট দিতে না পারে, তারা ভোট দিতেই যাবে না। এতে জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে সরকার গঠনের সুযোগ হারাবে বাংলাদেশ—যা হবে এক ভয়াবহ ঘটনা।”
শেষে শেখ হাসিনা জানান, আওয়ামী লীগ নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আইনগত ও কূটনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবে।