এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ০৮ নভেম্বর, ২০২৫, ০৪:১১ পিএম

মার্কিন ভিসা আবেদনকারীদের জন্য বড় ধাক্কা! যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চাইলে এখন থেকে ডায়াবেটিস বা স্থূলতার মতো রোগ থাকলে ভিসা বাতিল হতে পারে—এমন নির্দেশনা জারি করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন।
ওয়াশিংটনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম কেএফএফ হেলথ নিউজ জানিয়েছে, এই নতুন নির্দেশনা মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোতে নোটিশ আকারে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যেসব প্রার্থীর এমন স্বাস্থ্য সমস্যা আছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘পাবলিক চার্জ’ বা অর্থনৈতিক বোঝা হয়ে উঠতে পারেন। তাই ভিসা দেওয়ার আগে এসব ঝুঁকি যাচাই করতে বলা হয়েছে।
আগে যেখানে ভিসা আবেদনকারীর ছোঁয়াচে রোগ, টিকাদান ইতিহাস ও মানসিক স্বাস্থ্য যাচাই করা হতো, সেখানে এখন ডায়াবেটিস, স্থূলতা, হৃদরোগ, ক্যানসার, শ্বাসযন্ত্র, স্নায়ু ও বিপাকজনিত রোগ সম্পর্কেও খোঁজ নেওয়া হবে। এই রোগগুলোর চিকিৎসায় বিপুল অর্থ ব্যয় হয়, তাই ভিসা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আবেদনকারীর চিকিৎসা খরচ বহনের সামর্থ্য আছে কি না তা যাচাই করতে।
অলাভজনক আইনি সহায়তা সংস্থা ক্যাথলিক লিগ্যাল ইমিগ্রেশন নেটওয়ার্কের সিনিয়র অ্যাটর্নি চার্লস হুইলার বলেন, “যদিও নির্দেশনা সব ভিসা ধরনের জন্য প্রযোজ্য, তবে এটি মূলত স্থায়ী বসবাসের আবেদনকারীদের পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি ওপর বেশি প্রভাব ফেলবে।”
তিনি আরও বলেন, “চিকিৎসা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ভিসা কর্মকর্তাদের হাতে দেওয়া বেশ উদ্বেগজনক। তারা চিকিৎসক নন, এবং তাদের পক্ষপাত বা অনুমান ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে।”
পররাষ্ট্র দপ্তরের নতুন নির্দেশিকায় কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে, আবেদনকারীর এমন আর্থিক সক্ষমতা আছে কি না, যা দিয়ে তিনি আজীবন নিজের চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে পারবেন, সরকারি সহায়তা বা দীর্ঘমেয়াদি যত্ন ছাড়াই। পাশাপাশি, পরিবারের নির্ভরশীল সদস্যদের মধ্যে কেউ অসুস্থ থাকলে, তা আবেদনকারীর কাজ বা উপার্জনে প্রভাব ফেলবে কি না, তাও খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নীতিমালা ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসীবিরোধী অবস্থানের ধারাবাহিক অংশ, যার লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়িত করা এবং নতুন অভিবাসীদের নিরুৎসাহিত করা। এর আগে দেশটি দেখেছে গণগ্রেপ্তার অভিযান, শরণার্থীদের নিষেধাজ্ঞা এবং অভিবাসন সীমিত করার নানা পদক্ষেপ।
এছাড়া, গত জুলাইতে মার্কিন ভিসার জন্য “ইন্টিগ্রিটি ফি” নামে একটি নতুন খরচ যোগ করা হয়েছে। ২০২৬ সাল থেকে আবেদনপ্রতি ২৫০ ডলার ফি দিতে হবে, যা বিদেশি আবেদনকারীদের ওপর আরেকটি বাড়তি চাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে—বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল, গ্রিন কার্ডধারীদের ওপর কঠোরতা, এবং এখন রোগভিত্তিক স্ক্রিনিং—সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দরজা বিদেশিদের জন্য আরও সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।