ঢাকা, সোমবার, নভেম্বর ১০, ২০২৫ | ২৬ কার্তিক ১৪৩২
Logo
logo

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আমেরিকার জনগণ! ভোটে রেকর্ড ব্যবধানে হেরে গেল ট্রাম্পপন্থীরা


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ১০ নভেম্বর, ২০২৫, ১১:১১ এএম

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আমেরিকার জনগণ! ভোটে রেকর্ড ব্যবধানে হেরে গেল ট্রাম্পপন্থীরা

আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জনমত এখন আগের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন জরিপে এ ধরা পড়লেও, গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কের মেয়র এবং নিউ জার্সি ও ভার্জিনিয়ার গভর্নর নির্বাচনের ফলাফল তা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে। এই অবস্থান বুঝতে পেরে রিপাবলিকান পার্টির নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখন এই নির্বাচনগুলোতে তাঁর ভূমিকা খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করছেন।

এই তিন গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থীদের জয় রিপাবলিকানদের জন্য বড় ধরনের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, 'আমি নির্বাচনগুলো দেখেছি। তবে এসব বিষয়ে আমি তেমনভাবে জড়িত ছিলাম না।' তিনি এমনকি নির্বাচনে প্রার্থীদের সমর্থন দেওয়ার কথাও অস্বীকার করেন। ট্রাম্প দাবি করেন, 'আমি ভার্জিনিয়ার গভর্নর প্রার্থীকে সমর্থন করিনি। নিউ জার্সির প্রার্থীকেও খুব বেশি সাহায্য করিনি। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞাসা করা হলে আমি শুধু বলেছিলাম—আপনি কি একজন "ঠগ" চান, নাকি একজন "বামপন্থী"?'

ট্রাম্প নিজেকে যতই দূরত্বে রাখার চেষ্টা করুন না কেন, বাস্তবে মঙ্গলবারের নির্বাচনে আমেরিকার জনগণ আসলে তাঁর বিরুদ্ধেই ভোট দিয়েছেন। বলা যায়, ভোটের ব্যালটে ট্রাম্পের নাম না থাকলেও এর আগে কখনোই কোনো নির্বাচনে এত স্পষ্টভাবে তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার নজির দেখা যায়নি।


এই সপ্তাহের সবচেয়ে বড় লক্ষণীয় বিষয় হলো, ট্রাম্পবিরোধী ভোটারদের সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে, আর ট্রাম্পপন্থী ভোটারদের সংখ্যা কমেছে। নির্বাচনের আগেই সিএনএনের একটি সমীক্ষায় এই চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। সেই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, নিবন্ধিত ভোটারদের ৪১ শতাংশ বলেছেন, যদি এখন কংগ্রেস নির্বাচন হয় তবে তারা ট্রাম্পের বিরোধিতা করার জন্য ভোট দেবেন। অন্যদিকে, মাত্র ২১ শতাংশ ভোটার ট্রাম্পকে সমর্থন করার কথা বলেছেন। অর্থাৎ, ট্রাম্পবিরোধী ভোট ট্রাম্পপন্থী ভোটের প্রায় দ্বিগুণ! এটি একেবারেই স্বাভাবিক পরিস্থিতি নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অজনপ্রিয় প্রেসিডেন্টরা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলেও, সিএনএনের সমীক্ষা অনুযায়ী গত প্রায় ২০ বছরে এত বড় ব্যবধান আর কখনো দেখা যায়নি।

এর আগে ২০০৬ সালে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার কথা বলেছিলেন ৩৬ শতাংশ মানুষ, আর মাত্র ১৫ শতাংশ তাঁর পক্ষে ভোট দেওয়ার কথা বলেছিলেন। ২০১৮ সালে ট্রাম্পের প্রথম মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগেও এই ব্যবধান এতটা বড় ছিল না। তখন ট্রাম্পবিরোধী ছিলেন ৩৮ শতাংশ, আর ট্রাম্পপন্থী ছিলেন ২৫ শতাংশ।

রাজ্যগুলোর ফলাফলেও একই চিত্র

শুধু সমীক্ষায়ই নয়, বাস্তব নির্বাচনের ফলাফলও একই কথা বলছে। পুরো দেশজুড়ে ভোট না হলেও, ভার্জিনিয়া ও নিউ জার্সির বুথফেরত জরিপের তথ্য অনুযায়ী ট্রাম্পবিরোধী ভোটের ব্যবধান আরও বেড়েছে।

২০১৭ সালে ভার্জিনিয়ায় ট্রাম্পবিরোধী ও ট্রাম্পপন্থী ভোটের ব্যবধান ছিল ১৭ পয়েন্ট (৩৪%-১৭%)। এবার সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ পয়েন্টে (৩৮%-১৬%)। নিউ জার্সিতে এই ব্যবধান আরও বেশি বেড়েছে। সেখানে ২০১৭ সালে এই ব্যবধান ছিল ১৭ পয়েন্ট (২৮%-১১%)। এবার সেটি বেড়ে হয়েছে ২৮ পয়েন্ট (৪১%-১৩%)।

কেন এই পরিবর্তন?

ট্রাম্পবিরোধী ভোট বাড়ার পেছনে মূলত দুটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রথমত, 'নো কিংস' আন্দোলন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি ও কর্তৃত্ববাদী আচরণের বিরুদ্ধে গত মাসে সারা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এই আন্দোলনের সমাবেশগুলো কাকতালীয় ছিল না। ট্রাম্পবিরোধী এই আন্দোলনগুলো এখনো আগের মতোই শক্তিশালী, সক্রিয় এবং আশাব্যঞ্জক। এই আন্দোলনের সদস্যরা হয়তো এখন ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে পুরোপুরি আস্থাশীল নন, কিন্তু তারা রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাননি; বরং সক্রিয়ভাবে ভোট দিতে প্রস্তুত।

দ্বিতীয় কারণ হলো, ট্রাম্পের রাজনৈতিক আধিপত্য থাকা সত্ত্বেও তাঁর মূল ভোটার গোষ্ঠী এখন তেমন উৎসাহিত নন।