এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর, ২০২৫, ১১:১১ এএম

পাকিস্তানে সংবিধান সংশোধনী নিয়ে বিরোধী জোটগুলো কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিলেও, ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএলএন)-কে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে তাদের জোটসঙ্গীরা।
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ রবিবার ১০ নভেম্বর, ২০২৫)২৭তম সংবিধান সংশোধনীতে জোটসঙ্গীদের সমর্থনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি এই সমর্থনকে জাতীয় ঐক্য এবং সম্মিলিত অঙ্গীকারের প্রতিফলন হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ড়ান্ত খসড়া অনুমোদন এবং প্রধানমন্ত্রীর কৃতজ্ঞতা
রবিবার আইন ও বিচার বিষয়ক সিনেট এবং জাতীয় পরিষদের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে গঠিত যৌথ সংসদীয় কমিটির বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী সরকার ও জোটের সিনেটরদের জন্য এক নৈশভোজের আয়োজন করেন। এই বৈঠকেই প্রস্তাবিত ২৭তম সংশোধনীর পূর্ণাঙ্গ খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আমার সব মিত্র দলই সরকারের জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গির পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে। সহযোগিতার এই মানসিকতা আমাদের ফেডারেশনকে আরও শক্তিশালী করেছে।" তিনি জানান, উত্তম শাসন নিশ্চিত করতে এবং প্রদেশগুলোর মধ্যে সম্প্রীতি বাড়াতে সরকার ও সব জোটসঙ্গী একসাথে কাজ করেছে।
এই সময় প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি এবং সব জোট দলের নেতাদের গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্য জোরদারে তাঁদের সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
কারা বৈঠকে অংশ নিলেন না?
গুরুত্বপূর্ণ এই যৌথ সংসদীয় কমিটির বৈঠকটি কয়েকটি বিরোধী দল বয়কট করেছে। এই দলগুলোর মধ্যে ছিল— পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (ফজল), পখতুনখোয়া মিল্লি আওয়ামী পার্টি (পিকেএমএপি) এবং মজলিসে ওয়াহদাতুল মুসলেমিন (এমডব্লিউএম)।
জানা গেছে, মন্ত্রিসভার অনুমোদিত ২৭তম সংবিধান সংশোধনীর খসড়া সোমবার সিনেটে উত্থাপন করা হতে পারে।
মূল সংশোধনীতে কী আছে? সামরিক বাহিনীর শীর্ষ পদে বড় পরিবর্তন!
প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলোর মধ্যে সংবিধানের ২৪৩ ধারা সংশোধনের প্রস্তাব একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বর্তমানে এই ধারায় বলা আছে, পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ কমান্ডার হলেন প্রেসিডেন্ট, তবে এর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ফেডারেল সরকারের হাতে থাকে।
প্রস্তাবিত সংশোধনীর প্রধান দিকগুলো হলো:
‘চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস’ নামে নতুন পদ: সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে এই নতুন পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে, যা কার্যকর হবে ২৭ নভেম্বর ২০২৫ থেকে। বর্তমান চিফ অব আর্মি স্টাফ এই পদে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
আজীবন উপাধি: ফিল্ড মার্শাল, মার্শাল অব এয়ার ফোর্স, অ্যাডমিরাল অব ফ্লিট উপাধিগুলো আজীবন বহাল থাকবে।
নিয়োগ পদ্ধতি: প্রধানমন্ত্রী চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস-এর সুপারিশে জাতীয় কৌশলগত কমান্ডের প্রধান নিয়োগ করবেন।
বিচার বিভাগেও বড় পরিবর্তন: ফেডারেল সাংবিধানিক আদালত
সংবিধান সংশোধনীতে বিচার বিভাগে বড় পরিবর্তনেরও প্রস্তাব করা হয়েছে:
ফেডারেল কনস্টিটিউশনাল কোর্ট: একটি ফেডারেল কনস্টিটিউশনাল কোর্ট (কেন্দ্রীয় সাংবিধানিক আদালত) প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব আছে। এই আদালতে সব প্রদেশের সমান প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হবে।
বিচারপতি নিয়োগ: এই আদালতে বিচারপতি নিয়োগে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী প্রধান ভূমিকা পালন করবেন। বিচারকের সংখ্যা পার্লামেন্ট নির্ধারণ করবে।
ক্ষমতার হস্তান্তর: সুপ্রিম কোর্টের কিছু ক্ষমতা নতুন এই আদালতে স্থানান্তরিত হবে।
প্রধান বিচারপতির মেয়াদ: ফেডারেল কনস্টিটিউশনাল কোর্টের প্রধান বিচারপতির মেয়াদ তিন বছর নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্টকে আজীবন দায়মুক্তি!
এই সংশোধনীর আরেকটি চমকপ্রদ প্রস্তাব হলো— প্রেসিডেন্ট আজীবন ফৌজদারি মামলার হাত থেকে দায়মুক্তি পাবেন।