ঢাকা, সোমবার, নভেম্বর ১০, ২০২৫ | ২৬ কার্তিক ১৪৩২
Logo
logo

সুদানের এল-ফাশারে গণহত্যা চলছে! ৮৯ হাজার মানুষ পালিয়ে বাঁচছে মৃত্যু থেকে


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ১০ নভেম্বর, ২০২৫, ১১:১১ এএম

সুদানের এল-ফাশারে গণহত্যা চলছে! ৮৯ হাজার মানুষ পালিয়ে বাঁচছে মৃত্যু থেকে

সুদানের উত্তর দারফুর প্রদেশের রাজধানী এল-ফাশার এখন সত্যিকারের মৃত্যু উপত্যকা। আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) শহরটি দখল করার পর শুরু হয়েছে ভয়ংকর হত্যাযজ্ঞ। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শত শত নিরস্ত্র মানুষকে খুন করা হয়েছে, নারীরা যৌন সহিংসতার শিকার, ঘরবাড়ি আর শরণার্থী ক্যাম্পে চলছে আগুন লাগানো।

একসময় জমজমাট এই শহরটা এখন ধ্বংসের স্তূপ। স্থানীয় হাসপাতাল, স্কুল, এমনকি আশ্রয়কেন্দ্রও আরএসএফের হামলা থেকে বাঁচেনি। শুধু একটা হাসপাতালেই অন্তত পাঁচশোর বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। খবর আলজাজিরা আর আনাদোলুর।

সুদানে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস জানিয়েছে, গত মাসে আরএসএফ এল-ফাশার দখল করার পর থেকে ‘নৃশংস হামলা’ আরও বেড়েছে। গত শনিবার (৮ নভেম্বর) সুদানে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রতিনিধি লি ফাং সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ পোস্ট করে বলেন, “এল-ফাশার শোকের শহরে পরিণত হয়েছে।”
তিনি বলেন, “১৮ মাস ধরে অবরোধ আর যুদ্ধে বেঁচে থাকা সাধারণ মানুষ এখন অকল্পনীয় নৃশংসতার শিকার।”
এই সতর্কতা এমন সময় এলো যখন সাহায্যকারী সংগঠনগুলো জানাচ্ছে, এল-ফাশার থেকে পালিয়ে আসা হাজার হাজার মানুষ তাওয়িলা শহরে ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখে। অনেকেরই খাবার, ওষুধ, আশ্রয় আর মানসিক সহায়তা দরকার।

রবিবার (৯ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানায়, এল-ফাশার থেকে নতুন করে আরও ৭ হাজারের বেশি সাধারণ মানুষ পালিয়েছে। ফলে গত মাসে আরএসএফ শহর দখলের পর থেকে মোট বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৮৯ হাজারে পৌঁছেছে।
জাতিসংঘের সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, ৫ থেকে ৮ নভেম্বরের মধ্যে এল-ফাশার থেকে ৭ হাজার ৭৫ জন বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তারা উত্তর দারফুরের তাওয়িলা, মেলিট আর সারাফ ওমরাসহ বিভিন্ন এলাকায় পালিয়েছে।

আইওএম জানায়, ২৬ অক্টোবর আরএসএফ এল-ফাশার দখলের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮৮ হাজার ৮৯২ জন শহর ছেড়েছে। দখলের আগে শহরের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার।
গত ২৮ অক্টোবর ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক গবেষণাগারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এল-ফাশারে ‘গণহত্যার’ প্রমাণ মিলেছে, যার মধ্যে স্যাটেলাইট ছবিতে রক্তের স্রোতও দেখা গেছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক গত শুক্রবার বলেন, এল-ফাশারে এখনও আটকে থাকা সাধারণ মানুষকে শহর থেকে বের হতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, “আমি আশঙ্কা করছি, শহরের ভেতর হত্যা, ধর্ষণ আর জাতিগত সহিংসতার মতো জঘন্য নৃশংসতা চলছে।”

২০২৩ সালের এপ্রিলে সুদানের সেনাবাহিনী (এসএএফ) আর আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই শুরু হয়, যা পুরোদস্তুর গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। জাতিসংঘ আর স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মতে, এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত ২০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে আর দেড় কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত।
দুর্ভোগ এতটাই বড় যে জাতিসংঘ এটাকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট বলে চিহ্নিত করেছে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাগুলো সংঘাত বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে।