এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ১১ নভেম্বর, ২০২৫, ০৪:১১ পিএম

আমেরিকার রক্ষণশীল রাজনীতির মূল শিবির, বিশেষ করে যারা খ্রিস্টান ইভানজেলিক্যাল হিসেবে পরিচিত, তারাই দীর্ঘদিন ধরে ছিলেন ইসরাইলের সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক। কিন্তু গাজায় চলমান যুদ্ধ এবং তাদেরই ভিতরের প্রভাবশালী নেতাদের তীব্র সমালোচনার দাঁতভাঙা জবাবে, সেই অটল সমর্থনের দেয়ালে এখন ফাটল ধরতে শুরু করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই মনোভাবের বদল ইসরাইলের জন্য শুধু রাজনৈতিক সমস্যাই নয়, বরং ভবিষ্যতে অর্থ ও অস্ত্রের জোগানেও বড় ধাক্কা দিতে পারে।
এক সময় ইভানজেলিক্যালদের একেবারে গোঁড়া বিশ্বাস ছিল যে, ঈশ্বর ইহুদি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে একটি চিরস্থায়ী চুক্তি করেছেন এবং ইসরাইলই হলো তাদের ‘প্রতিশ্রুত ভূমি’। কিন্তু গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলা এবং সেটি চালানোর জন্য আমেরিকার বিশাল অঙ্কের সাহায্য—এসব নিয়ে যখন থেকে তীব্র প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়েছে, তখন থেকেই তাদের সেই অন্ধবিশ্বাসে নড়ে চড়ে বসেছে।
এবারের ঘটনায় রক্ষণশীল শিবিরেরই কয়েকজন বড় মাপের নেতা, যেমন ট্যাকার কার্লসন, ক্যান্ডেস ওভেন্স এবং মারজরি টেলর গ্রিন সরাসরি মাঠে নেমে ইসরাইলের সমালোচনা করছেন। তাদের এই সরব অবস্থানের জেরে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে রাজনৈতিক আলোচনাচক্রে ইসরাইল-বিরোধী কথাবার্তা আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে।
অকলাহোমার এক ইভানজেলিক্যাল পাদ্রী এবং ‘পাস্টরস ফর ট্রাম্প’-এর প্রতিষ্ঠাতা জ্যাকসন লাহমেয়ার স্বীকার করে বলেছেন, “ইভানজেলিক্যাল সম্প্রদায় ঐতিহ্যগতভাবেই ইসরাইলের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এখন অনলাইনে যে আলোচনা হচ্ছে, তার হাওয়া পুরোপুরি বদলে গেছে।”
পিউ রিসার্চ সেন্টারের একটি সাম্প্রতিক জরিপে চোখ কপালে ওঠার মতো তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তাতে দেখা গেছে, ৫০ বছরের কম বয়সী রক্ষণশীল আমেরিকানদের মধ্যে ইসরাইল সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা মাত্র তিন বছরের মধ্যে ৩৫ শতাংশ থেকে লাফিয়ে ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই রদবদল ইসরাইলের জন্য ভবিষ্যতে অশনি সংকেত বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ইভানজেলিক্যাল গোষ্ঠীগুলোর সমর্থন দিন দিন শক্তিশালী হতে থাকে। ২০০৬ সালে গঠিত হয় অত্যন্ত শক্তিশালী সংগঠন ‘Christians United for Israel (CUFI)’, যেটি লাখ লাখ সদস্যকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসে। কিন্তু গাজার এই সর্বশেষ যুদ্ধ সেই ঐক্যবদ্ধ শিবিরের মধ্যেই প্রথমবারের মতো ফাটল ধরিয়েছে।
মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক শিবলি তেলহামি তাঁর গবেষণায় দেখেছেন, “১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী ইভানজেলিক্যাল তরুণদের মধ্যে এখন মাত্র ৩২ শতাংশ ইসরাইলের প্রতি সহানুভূতিশীল। আর একই বয়সী রিপাবলিকান তরুণদের মধ্যে এই সংখ্যা আরও ভয়াবহ রকম কম, মাত্র ২৪ শতাংশ।”
তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “রক্ষণশীল রাজনীতির মঞ্চে এখন এক নতুন বাস্তবতা তৈরি হচ্ছে। অনেকেই প্রকাশ্যেই আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতিতে ইসরাইলের বিশেষ অবস্থান নিয়ে সন্দেহ পোষণ করছেন। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যদি এই ধারা বজায় থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে ইসরাইলকে দেওয়া আমেরিকার সামরিক ও আর্থিক সাহায্য হ্রাস পেতে পারে।”