এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ১১ নভেম্বর, ২০২৫, ০৪:১১ পিএম

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে আসন্ন বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর)।
ঠিক এই সময়েই লন্ডনের বিখ্যাত ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সের দুই আইনজীবী স্টিভেন পাওলস ও তাতিয়ান ইটওয়েল জাতিসংঘে শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে একটি জরুরি আপিল দাখিল করেছেন।
আপিলটিতে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে বিচার প্রক্রিয়া চলার বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এটি জমা দেওয়া হয় জাতিসংঘের বিচারক ও আইনজীবীদের স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ দূত এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বিষয়ক বিশেষ দূতের কাছে।
ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্স সোমবার (১০ নভেম্বর) তাদের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানায়। প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার, যুদ্ধাপরাধ ও ন্যায়বিচার সংক্রান্ত আইনি কাজের জন্য সুপরিচিত।
ওই আপিলে দুই ব্রিটিশ আইনজীবী দাবি করেছেন, “বাংলাদেশে ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা প্রাধান্য পাচ্ছে। জনসমর্থনবিহীন একটি অন্তর্বর্তী সরকার এই বিচার পরিচালনা করছে।”
তাদের মতে, এই প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার ন্যায্য বিচারের অধিকার মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
আপিলে বলা হয়, “২০০৯ সাল থেকে শেখ হাসিনা টানা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ২০২৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি ও আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফেরেন। কিন্তু সেই বছরের জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন ধীরে ধীরে শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবির গণআন্দোলনে রূপ নেয়। ৫ আগস্ট সহিংসতার পর তিনি দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন। তিন দিন পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।”
এরপর শেখ হাসিনা ও আরও দুই সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা হয়। অভিযোগ, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় সরকারের কঠোর প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। বর্তমানে শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন, ফলে তার বিচার অনুপস্থিতিতেই চলছে।
রায় খুব শিগগিরই ঘোষণা হতে পারে—এবং আইনজীবীদের আশঙ্কা, শেখ হাসিনা মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারেন।
দুই ব্রিটিশ আইনজীবীর আপিলে আরও বলা হয়, “যেমনভাবে শেখ হাসিনার সরকার ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তেমনভাবেই তাদের ওপর প্রতিশোধমূলক নির্যাতনের ঘটনাও ঘটছে। অথচ ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সরকারবিরোধী আন্দোলনে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।”
আপিলে শেখ হাসিনার মামলায় কয়েকটি গুরুতর উদ্বেগের কথা তুলে ধরা হয়:
১️⃣ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালতের অভাব:
আইসিসিপিআরের (ICCPR) অনুচ্ছেদ ১৪(১) অনুযায়ী প্রত্যেকের স্বাধীন আদালতে বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু এই মামলায় বিচারক ও প্রসিকিউটরের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিরপেক্ষতার প্রশ্ন তুলেছে। অভিযোগ আছে, প্রধান প্রসিকিউটর নিজেই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সভায় অংশ নিয়েছেন।
২️⃣ অনুপস্থিতিতে বিচার ও প্রতিরক্ষার সুযোগ না থাকা:
শেখ হাসিনাকে অভিযোগের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক নোটিশ দেওয়া হয়নি, অথচ তাকে অনুপস্থিতিতেই বিচার করা হচ্ছে। ভারত থেকে তার প্রত্যর্পণের অনুরোধও এখনো প্রক্রিয়াধীন।
এদিকে, আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা হুমকি ও হামলার কারণে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। ফলে শেখ হাসিনার হয়ে এখন রাষ্ট্রনিযুক্ত এক আইনজীবী কাজ করছেন, যার সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগই নেই।
৩️⃣ মৃত্যুদণ্ডের আশঙ্কা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন:
আইনজীবীরা সতর্ক করেছেন, এমন ত্রুটিপূর্ণ বিচারপ্রক্রিয়ায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে তা বিচারবহির্ভূত হত্যার শামিল হবে। এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের ৬ নম্বর অনুচ্ছেদে উল্লেখিত “বেঁচে থাকার অধিকারের” সরাসরি লঙ্ঘন।