ঢাকা, বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ১৩, ২০২৫ | ২৯ কার্তিক ১৪৩২
Logo
logo

৬০০ দিন হেঁটে ১২ দেশ পেরিয়ে ইন্দোনেশিয়াতেই খুঁজে পেলাম জীবনের সত্যিকারের শান্তি


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ১৩ নভেম্বর, ২০২৫, ০২:১১ পিএম

৬০০ দিন হেঁটে ১২ দেশ পেরিয়ে ইন্দোনেশিয়াতেই খুঁজে পেলাম জীবনের সত্যিকারের শান্তি

পৃথিবীকে হেঁটে দেখার যাত্রায় কেটে গেছে ৬০০ দিন। বাংলাদেশ থেকে বের হয়ে এখন পর্যন্ত হেঁটে ঘুরেছি ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং সর্বশেষ ইন্দোনেশিয়া। এত দেশ পেরিয়ে এখন কেউ যদি জিজ্ঞেস করে—‘সবচেয়ে পছন্দের দেশ কোনটি?’ আমার উত্তর একটাই—ইন্দোনেশিয়া।

প্রতিটি দেশের নিজস্ব সৌন্দর্য আছে, কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার কিছু যেন আলাদা। এখানকার দ্বীপ, ভাষা, সংস্কৃতি, আবহাওয়া আর মানুষের আন্তরিকতা—সব মিলিয়ে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ হয়েছি এখানকার মানুষদের অতিথিপরায়ণতায়। পথ চলতে অনেকেই শুধু শুনেছে আমি পর্যটক—তারপর হাসিমুখে খাবারের দাম নেয়নি, কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, কেউবা বলেছে, “তুমি আমাদের দেশের সম্মান বাড়াচ্ছ।” তাদের এই ভালোবাসা সত্যিই মন ছুঁয়ে গেছে।

আমি সবসময় জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা এড়িয়ে চলি। কারণ, হেঁটে ভ্রমণ মানেই আমার কাছে মানুষের জীবনের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া। তাই শহরের চেয়ে গ্রামের পথে হাঁটতেই বেশি ভালো লাগে। ইন্দোনেশিয়ার গ্রামগুলোয় হাঁটার সময় মানুষের জীবন, পরিশ্রম, হাসি আর সরলতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। চায়ের দোকানে বসে স্থানীয়দের সঙ্গে গল্প করেছি, তাদের সংস্কৃতি দেখেছি, আর জেনেছি তাদের দৈনন্দিন জীবনের গল্প।

গ্রামের মানুষগুলো এতটাই আন্তরিক যে, কেউ নিজের কাজ থামিয়ে এসে কথা বলেছে, কেউ ছবি তুলেছে, কেউবা জানতে চেয়েছে, “তুমি এত দূর হেঁটে চলছ কেন?” তাদের হাসি, কৌতূহল আর ভালোবাসা আমার এই ভ্রমণকে আরও অর্থবহ করেছে।

ইন্দোনেশিয়ার মানুষ সময়ের প্রতি অবিশ্বাস্যভাবে সচেতন। তারা ভোরে ঘুম থেকে ওঠে, আর এশার নামাজের পর বিশ্রামে যায়। নিয়মিত জীবনযাপন, কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা—এই বিষয়গুলো আমাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।

ইন্দোনেশিয়ার গ্রামের সৌন্দর্য আর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য আমার মনে এক অদ্ভুত টান সৃষ্টি করেছে। তাদের আতিথেয়তা আর সরলতা এখনো টিকে আছে। আমি সত্যিই চাই, একদিন আবার ফিরে যাই সেই পথে—যেখানে মানুষ এখনো হাসিমুখে অতিথিকে স্বাগত জানায়।

৬০০ দিনের এই বিশ্বভ্রমণে আমি বুঝেছি, ভ্রমণ মানে শুধু স্থান পরিবর্তন নয়—এটা মানুষকে চেনার, সংস্কৃতিকে বোঝার এবং নিজের ভেতরের নতুন দিক আবিষ্কারের এক অনন্য যাত্রা। আর ইন্দোনেশিয়া, নিঃসন্দেহে, সেই যাত্রার সবচেয়ে হৃদয়ছোঁয়া অধ্যায়।