এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর, ২০২৫, ০৪:১১ পিএম

ভেনেজুয়েলায় সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্তের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই সপ্তাহে কয়েক দফা গোপন ব্রিফিং এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তি দেখানোর পর তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তার মন প্রায় তৈরি।
সিএনএনকে চারটি সূত্র জানিয়েছে—এই সপ্তাহেই ট্রাম্পকে ভেনেজুয়েলার ভেতরে সামরিক অভিযানের সম্ভাব্য সব বিকল্প জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতি নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরাতে গেলে কী ঝুঁকি ও সুযোগ তৈরি হবে, তা নিয়ে হোয়াইট হাউসে গভীর আলোচনা হয়েছে।
এই সময়ে পেন্টাগনও পিছিয়ে নেই। “অপারেশন সাউদার্ন স্পিয়ার” নামে নতুন এক সামরিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মার্কিন নৌবাহিনী ক্যারিবীয় অঞ্চলে ইতিমধ্যে এক ডজনেরও বেশি যুদ্ধজাহাজ আর ১৫,০০০ সৈন্য মোতায়েন করেছে।
শুক্রবার এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, “আমি কিছুটা আমার মন তৈরি করেছি—হ্যাঁ। এখনই বলছি না কী করব, তবে সিদ্ধান্তের কাছাকাছি।”
সেদিনই পরপর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ, জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইনসহ একটি ছোট দল তাকে প্রথম ব্রিফিং দেয়। এরপর সিচুয়েশন রুমে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওসহ বড় জাতীয় নিরাপত্তা দলের সঙ্গে আরেক দফা আলোচনা হয়।
উভয় বৈঠকেই ভেনেজুয়েলায় সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে।
বিমান হামলা থেকে সরাসরি শাসন পরিবর্তন—সব বিকল্প টেবিলে
ট্রাম্পকে জানানো হয়েছে—
সামরিক ঘাঁটি বা সরকারি স্থাপনায় বিমান হামলা
মাদক পাচারের পথ এবং কোকেন উৎপাদন কেন্দ্র টার্গেট করা
কিংবা সরাসরি মাদুরোকে সরানোর অভিযান
সবই এখন তার বিবেচনায় আছে।
তবে তিনি চাইলে কোনো পদক্ষেপ না-নেওয়ার সিদ্ধান্তও দিতে পারেন।
গত মাসে ট্রাম্প বলেন, ভেনেজুয়েলার ভেতরে সিআইএকে কাজ করার অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু মার্কিন প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন—মাঠের ভেতরে আক্রমণ চালাতে আইনি ভিত্তি দুর্বল, যদিও প্রয়োজনে তারা তা তৈরি করতে পারে।
ট্রাম্প সিবিএসের “৬০ মিনিটস”-এ বলেছিলেন, তিনি ভেনেজুয়েলার ভেতরে হামলার কথা ‘ভাবছেন না’। কিন্তু এখন তার ভাষা ও সামরিক প্রস্তুতি বলে দিচ্ছে—পরিস্থিতি দ্রুত বদলাচ্ছে।
ক্যারিবীয় সাগরে যুদ্ধজাহাজের মিছিল
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ক্যারিবীয় অঞ্চলে মার্কিন নৌবাহিনীর বড়সড় জমায়েত দেখা গেছে।
মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসন অন্তত ২০টি হামলা চালিয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এই সপ্তাহে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড আর. ফোর্ড ওই অঞ্চলে পৌঁছেছে। তার সঙ্গে আরও আছে—
ক্রুজার
ডেস্ট্রয়ার
ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা জাহাজ
উভচর আক্রমণকারী জাহাজ
এবং একটি আক্রমণকারী সাবমেরিন
মোটামুটি ১৫,০০০ মার্কিন সেনা এখন “রেডি স্ট্যাটাস”-এ। পুয়ের্তো রিকোর ঘাঁটিতেও ১০টি এফ-৩৫ জেট মোতায়েন করা হয়েছে।
ওদিকে ভেনেজুয়েলাও বলছে—তারা “বৃহৎ সামরিক মোতায়েন” শুরু করেছে।
মাদুরো: “এটা নতুন গাজা বা আফগানিস্তান হতে পারে”
কারাকাসে বক্তৃতায় মাদুরো কড়া হুঁশিয়ারি দেন—
মার্কিন হস্তক্ষেপ হলে “আরেকটি গাজা”, “নতুন আফগানিস্তান” বা “আবার ভিয়েতনাম” তৈরি হবে।
তিনি সরাসরি ওয়াশিংটনকে উদ্দেশ করে বলেন:
“দক্ষিণ আমেরিকায় যুদ্ধ শুরু করার চেষ্টা বন্ধ করুন। বোমা এবং হত্যাকাণ্ড নয়—শান্তির পথে ফিরে আসুন।”
ট্রাম্পের সামনে লাভ-ক্ষতি
মাদুরোকে সরাতে পারলে ট্রাম্প বড় রাজনৈতিক জয় দাবি করতে পারবেন—
একজন শক্তিশালী স্বৈরশাসককে ক্ষমতাচ্যুত করা
ভেনেজুয়ेलায় নির্বাচিত সরকার গঠনের সহায়তা
মাদক ও অভিবাসন প্রবাহ কমাতে সহযোগিতা
এবং সম্ভাব্য তেলচুক্তি
কিন্তু ঝুঁকিও কম নয়। ভেনেজুয়েলার ভাঙা বিরোধী দল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী এবং গেরিলা লড়াইয়ের সম্ভাবনা ট্রাম্পকে রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে কঠিন অবস্থায় ফেলতে পারে।
আমেরিকান রাজনীতিতে নতুন সংকট তৈরি হতে পারে
ট্রাম্প ২০১৬ সালে ক্ষমতায় এসেছিলেন বিদেশি যুদ্ধ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে।
এখন ল্যাটিন আমেরিকায় বড় ধরনের সংঘাতে জড়ালে তার রাজনৈতিক ভিত্তিই ভেঙে যেতে পারে।
উপ-রাষ্ট্রপতি জেডি ভ্যান্স ও পিট হেগসেথ—দুজনই বিদেশি যুদ্ধে অংশ নেওয়া প্রাক্তন সেনা—বহিরাগত সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রকে টেনে নেওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
একজন রিপাবলিকান কংগ্রেস স্টাফার বলেন,
“ট্রাম্পকে মানুষ ভোট দেয়নি ল্যাটিন আমেরিকার যুদ্ধ শুরু করতে। রাজনৈতিক সমর্থন না থাকলে কোনো অভিযানই সফল হবে না।”