এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর, ২০২৫, ০৪:১১ পিএম

লিবিয়ার উপকূলে ঘটে যাওয়া এক মর্মান্তিক নৌকাডুবিতে চার বাংলাদেশিসহ বেশ কয়েকজন অভিবাসনের মৃত্যু হয়েছে। আল-খুমস উপকূলের কাছে প্রায় ১০০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে নিয়ে যাচ্ছিল এমন দুটি নৌকা ডুবে যাওয়ার পর এই দুর্ঘটনা ঘটে।
বৃহস্পতিবার রাতে নৌকা দুটি উল্টে যায়, এবং শনিবার লিবিয়ান রেড ক্রিসেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে এই দুঃসংবাদ নিশ্চিত করেছে। সংস্থাটি জানায়, আল-খুমস উপকূলে দুটি নৌকা ডুবে যাওয়ার খবর পেয়েই উদ্ধারকর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
প্রথম নৌকাটিতে ছিলেন মোট ২৬ জন বাংলাদেশি নাগরিক। তাদের মধ্যেই চারজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এ পর্যন্ত তাদের নাম বা পরিচয় জানা যায়নি।
দ্বিতীয় নৌকাটিতে ছিলেন মোট ৬৯ জন যাত্রী। এর মধ্যে দুজন মিসরীয় এবং বাকি ৬৭ জনই সুদানের নাগরিক। আশ্চর্যজনকভাবে, এই দলের মধ্যে আটজন ছিল শিশু।
লিবিয়ান রেড ক্রিসেন্ট নিশ্চিত করেছে যে তাদের জরুরি উদ্ধার ও পুনরুদ্ধার দল বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের উদ্ধার, মৃতদেহ সংগ্রহ এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য কাজ করছে।
ত্রিপোলির উপকূলীয় এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই ইউরোপমুখী অনিয়মিত অভিবাসীদের একটি প্রধান রুট হিসেবে পরিচিত। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে, যা নিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোও ক্রমাগত উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে।
২০১১ সালে লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর থেকেই দেশটি ইউরোপগামী অভিবাসীদের জন্য একটি প্রধান ট্রানজিট রুটে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে সাড়ে আট লাখেরও বেশি অভিবাসী লিবিয়ায় অবস্থান করছে। গাদ্দাফির শাসনামলে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের অভিবাসীরা তেলসমৃদ্ধ লিবিয়ায় কাজ পেলেও, তার পতনের পর থেকে দেশটি বিভিন্ন মিলিশিয়া গোষ্ঠীর সংঘাতে জর্জরিত।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, লিবিয়ায় শরণার্থী ও অভিবাসীরা নিয়মিতভাবেই নির্যাতন, ধর্ষণ ও চাঁদাবাজির শিকার হয়।
অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন লিবিয়ার কোস্টগার্ডকে নানাবিধ সরঞ্জাম ও আর্থিক সহায়তা দিলেও, এই কোস্টগার্ডের সাথেই বিভিন্ন মিলিশিয়া ও অপরাধী গোষ্ঠীর যোগসূত্রের অভিযোগ উঠেছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো আরও দাবি করছে, ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের রাষ্ট্রীয় উদ্ধার অভিযান ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেওয়ায় সমুদ্রপথে যাত্রা আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি, ভূমধ্যসাগরে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত বেসরকারি দাতব্য সংস্থাগুলোকেও বিভিন্ন রাষ্ট্রের কঠোর নীতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম বুধবার তাদের সর্বশেষ তথ্যে জানিয়েছে, শুধু চলতি বছরেই মধ্য ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে এক হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটেছে।