ঢাকা, মঙ্গলবার, নভেম্বর ১৮, ২০২৫ | ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
Logo
logo

সৌদিতে শত শত ফাঁসি: বিদেশি শ্রমিকদের অবর্ণনীয় বিচার—মিসরীয় তরুণের করুণ পরিণতি ভাইরাল চাঞ্চল্য


এনবিএস ওয়েবডেস্ক   প্রকাশিত:  ১৮ নভেম্বর, ২০২৫, ০৫:১১ পিএম

সৌদিতে শত শত ফাঁসি: বিদেশি শ্রমিকদের অবর্ণনীয় বিচার—মিসরীয় তরুণের করুণ পরিণতি ভাইরাল চাঞ্চল্য

২৮ বছর বয়সী মিসরীয় মৎস্যজীবী মোহাম্মদ সাদ প্রতিদিনের মতোই শর্ম আল-শেখ উপকূলে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেদিনই বদলে যায় তাঁর জীবনের পথ। বাড়ির লোকজন মাসের পর মাস খুঁজেও কোনো খবর পাননি। এক বছর পর জানা গেল—সাদ সৌদি আরবের উত্তরাঞ্চলের তাবুক কারাগারে বন্দী। অভিযোগ—মাদক পাচার।

আট দীর্ঘ বছর কারাগারে থাকার পর গত ২১ অক্টোবর সাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। পরিবারকে কিছুই জানানো হয়নি। পরে এক সহবন্দীর মাধ্যমে খবর পান তারা। মৃত্যুর পর তাঁকে কোথায় দাফন করা হয়েছে—তাও অজানা রয়ে গেছে পরিবারের কাছে।

রোববার (১৬ নভেম্বর) সিএনএন জানিয়েছে—চলতি বছর সৌদি আরবে যাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, সাদ ছিলেন তাঁদের একজন। এ বছরই দেশটিতে কয়েক শ মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, যাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল প্রাণঘাতী নয়—মূলত মাদক–সম্পর্কিত।

বার্লিনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ESOHR এবং সৌদি বিচার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান Reprieve জানিয়েছে—২০২৪ সালে সৌদিতে ৩৪৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরের তুলনায় এই সংখ্যা দ্বিগুণ। আর ফাঁসিপ্রাপ্তদের সিংহভাগই বিদেশি শ্রমিক—বিশেষত মিসর, সোমালিয়া ও ইথিওপিয়ার নাগরিক। জীবিকার সন্ধানে সৌদিতে গিয়ে তারা আটকা পড়ছেন কঠোর বিচারব্যবস্থার ফাঁদে।

তাবুক কারাগারে আরও বিদেশির ফাঁসির অপেক্ষায় থাকার খবর পাওয়া গেছে। তাঁদের একজন ২৭ বছর বয়সী মিসরীয় মৎস্যজীবী এসসাম আল-শাজলি। অভিযোগ—তিনি অ্যামফিটামিন এবং অল্প পরিমাণ ‘হেরোইনসদৃশ’ পদার্থ বহন করছিলেন। পরিবারের দাবি—নৌকায় কী ছিল, শাজলি কিছুই জানতেন না।

সৌদি সরকার অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। জাতিসংঘকে পাঠানো চিঠিতে তারা বলেছে—সৌদিতে বিচারপ্রক্রিয়ায় গোপনীয়তা নেই, তিন ধাপের বিচার মেনে চলা হয়, বিদেশিদের কনস্যুলার সহায়তা দেওয়া হয় এবং মৃত্যুদণ্ডের পর দেহ নিজ দেশের দূতাবাসে হস্তান্তর করা হয়।

কিন্তু পরিবার আর অধিকারকর্মীদের অভিযোগ পাল্টে—অনেক সময়ই অভিযুক্ত ব্যক্তির আইনজীবী থাকে না, আর থাকলেও রায় বদলায় না।

তাবুক কারাগারের অভ্যন্তরীণ বিবরণ বলছে—মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীরা প্রতিদিন ভোরে আতঙ্কে থাকেন, সেদিন তাঁদের নাম ডাকা হবে কি না সেই অস্থিরতায়।

এদিকে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান দেশকে আধুনিকায়নের প্রচারণা চালাচ্ছেন—নারীদের গাড়ি চালানো, ধর্মীয় পুলিশের ক্ষমতা সীমিত করা, নানা সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজনসহ একের পর এক পদক্ষেপে বিশ্বের সামনে সৌদির নতুন ভাবমূর্তি তুলে ধরছেন। তিনি সাত বছর পর যুক্তরাষ্ট্র সফরেও গেছেন। তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে মানবাধিকার ইস্যু তোলা হবে—এমন সম্ভাবনা খুবই কম বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অধিকারকর্মীদের মতে, বিপুল বাণিজ্য, অস্ত্রচুক্তি আর কূটনৈতিক সম্পর্কের আড়ালে সৌদিতে ভয় দেখানোর নীতি অপরিবর্তিত। Reprieve–এর মধ্যপ্রাচ্যের মৃত্যুদণ্ডবিষয়ক প্রধান জিদ বায়সিউনি বলেন—‘পুরো ব্যবস্থাটাই গোপনীয় আর কঠোর নিয়ন্ত্রণে চলে। পরিবারগুলোকে বছরের পর বছর অনিশ্চয়তা আর আতঙ্কে রেখে দেওয়া হয়।’