এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর, ২০২৫, ০৫:১১ পিএম

ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা বাণিজ্য চুক্তি শেষ পর্যন্ত সফল হওয়ার পথে। সরকারি সূত্র থেকে জানা গেছে, প্রথম দফার আলোচনা প্রায় শেষের দিকে, যার ফলে ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপ করা ৫০ শতাংশ উচ্চশুল্ক কমানোর পথ খুলে যাবে। পাশাপাশি মার্কিন বাজারে ভারতীয় পণ্যের প্রবেশাধিকারের সমস্যাও দূর হবে।
সূত্রের দাবি, রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনার কারণে ভারতের রপ্তানিপণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক ও অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ জরিমানা বসিয়েছে, সেই জটিলতা সমাধানেই এই চুক্তি সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
এক সরকারি আধিকারিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, "চুক্তির দুটি অংশ রয়েছে। একটি দীর্ঘমেয়াদি, অন্যটি তাৎক্ষণিক সমাধানের প্যাকেজ। পাল্টা শুল্ক সংক্রান্ত প্যাকেজটি প্রায় তৈরি এবং শীঘ্রই তা ঘোষণা করা হতে পারে।"
তিনি আরও যোগ করেন, "২৫ শতাংশ জরিমানার বিষয়টি সমাধান না হলে এই চুক্তির কোনও মূল্য থাকবে না, তাই এই বিষয়টিতেই সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে।"
এই চুক্তি পর্যায়ক্রমে কয়েকটি ধাপে বাস্তবায়িত হবে। প্রথম ধাপেই শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে। দুই দেশের আলোচনা শেষে সঠিক সময়েই এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে।
২০২৬ সালের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলোর এলপিজি (রান্নার গ্যাস) আমদানি নিয়ে সম্প্রতি এক বছরের চুক্তি হয়েছে, এটিকেও অনেকেই দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের কৌশল হিসেবে দেখছেন। যদিও সরকারি ভাবে বলা হচ্ছে যে এটি মূল বাণিজ্য চুক্তির অংশ নয়, তবুও দুই দেশের বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষার বৃহত্তর পরিকল্পনার সাথেই এটি যুক্ত।
ভারতের সাথে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের অসন্তোষ বহুদিনের। তাই রান্নার গ্যাস আমদানিকে অনেক বিশ্লেষকই দুই দেশের মধ্যে বরফ গলানোর একটি কূটনৈতিক কৌশল হিসেবে বিবেচনা করছেন।
২০২৫ সালের শরত্কালেই প্রথম ধাপের চুক্তি চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ছয় দফা বৈঠক সম্পন্ন করেছে। গত মাসে বাণিজ্য সচিব রাজেশ আগরওয়ালের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় প্রতিনিধি দল ওয়াশিংটনে তিন দিনের দীর্ঘ আলোচনায় অংশ নিয়েছিল, যা ১৭ অক্টোবর শেষ হয়।
ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্ক এবং রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ করের কারণে দুই দেশের সম্পর্কে যে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল, এই চুক্তির মাধ্যমে তা কাটিয়ে উঠতে পারবে উভয় পক্ষ।
বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ১৯১ বিলিয়ন ডলার। নতুন চুক্তির মাধ্যমে এই বাণিজ্য ২০৩০ সালের মধ্যে বাড়িয়ে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর লক্ষ্য রয়েছে। এজন্য পেস্তা, আপেল, ইথানল, এবং জিনগতভাবে পরিবর্তিত শস্যের মতো পণ্যের জন্য ভারতীয় বাজারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আরও বড় প্রবেশাধিকার দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র ২০২৪ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার ছিল। তবে উচ্চশুল্কের কারণে ভারতের রপ্তানি গত সেপ্টেম্বরে ১১.৯৩ শতাংশ কমেছে, অন্যদিকে আমদানি বেড়েছে প্রায় ১১.৭৮ শতাংশ।
এক মার্কিন সূত্র জানিয়েছে, "ভারতের সঙ্গে ন্যায়সঙ্গত বাণিজ্য চুক্তি খুব কাছাকাছি পৌঁছেছে। ভারতীয় পণ্যের ওপর চাপানো শুল্কও একসময় কমানো হবে।"
তবে একইসাথে যুক্তরাষ্ট্রের একটি খসড়া বিল নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য থাকলে কোনো দেশের ওপর ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসানোর প্রস্তাব রয়েছে। দুই দেশই তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক প্রয়োজন অনুযায়ী বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার নীতিই বজায় রাখবে বলে ожиনা করা হচ্ছে।