এনবিএস ওয়েবডেস্ক প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৬:১২ পিএম

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ইসরাইলকে আগের মতোই সমর্থন দেবেন, তা অনেকের কাছেই ছিল অনুমিত। প্রথম মেয়াদে ইসরাইলের প্রতি তাঁর অবস্থান ছিল স্পষ্ট ও কঠোর। তবে গাজায় চলমান যুদ্ধ এবং সেখানে বাড়তে থাকা প্রাণহানির প্রেক্ষাপটে সেই সমর্থন এখন নিজ দেশেই প্রশ্নের মুখে পড়ছে।
গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত ৭০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের নিঃশর্ত ইসরাইল সমর্থন তাঁর রাজনৈতিক ভিত্তিতেই অস্বস্তি তৈরি করেছে। বিশেষ করে ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ বা ম্যাগা আন্দোলনের একটি বড় অংশ এতে ক্ষুব্ধ।
সমালোচকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি যখন চাপের মধ্যে, তখন বিদেশে বিপুল অর্থ ব্যয় মেনে নেওয়া কঠিন। দেশে মূল্যস্ফীতি, স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় বৃদ্ধি এবং সরকারি অচলাবস্থা চলছে—এই বাস্তবতার মধ্যেও ইসরাইলের জন্য সহায়তা অব্যাহত রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর ইসরাইলকে ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে। এই সহায়তা চুক্তি ছিল ১০ বছরের জন্য, যা কার্যকর হয় ২০১৯ সালে। চলতি বছরের মার্চে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও চার বিলিয়ন ডলারের জরুরি সামরিক সহায়তার ঘোষণা দেন। তিনি জানান, ট্রাম্প প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ইসরাইলের কাছে মোট ১২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
‘কস্ট অব ওয়ার প্রজেক্ট’-এর হিসাব অনুযায়ী, গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরাইলকে দেওয়া মোট সহায়তার পরিমাণ ২১ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
এই সমর্থন শুধু অর্থ বা অস্ত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। জাতিসংঘে ইসরাইলবিরোধী প্রস্তাব আটকে দিচ্ছে ওয়াশিংটন। এমনকি আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের মতো সংস্থার বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এসব সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়ছে ট্রাম্পের রাজনৈতিক শিবিরেই। ম্যাগা আন্দোলনের প্রভাবশালী কণ্ঠ টাকার কার্লসন প্রকাশ্যে ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন। তাঁর ভাষায়, সহিংসতা উসকে দেওয়া আর শান্তি চাওয়ার মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন রয়েছে।
ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা স্টিভ ব্যাননও ইসরাইলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিশেষ সম্পর্ক’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রকে অপ্রয়োজনীয় সংঘাতে জড়িয়ে ফেলছেন। সমালোচনার তালিকায় আছেন রিপাবলিকান কংগ্রেসওম্যান মার্জোরি টেলর গ্রিনও। তিনি গাজায় ‘গণহত্যা, মানবিক সংকট ও অনাহার’-এর কথা প্রকাশ্যে উল্লেখ করেছেন।
এর জবাবে ট্রাম্প তাঁকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে আখ্যা দেন। তবুও গ্রিন এখনো ম্যাগা সমর্থকদের একটি অংশের কাছে জনপ্রিয়, যারা মনে করেন তিনি ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন।