ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ২৫, ২০২৫ | ১১ পৌষ ১৪৩২
Logo
logo

১৭ বছর পর দেশে ফিরে তারেক রহমানের কণ্ঠে ‘নিরাপদ বাংলাদেশ’, গণতন্ত্র ফেরানোর ডাক


আব্দুল্লাহ আল মাসুম     প্রকাশিত:  ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৬:১২ পিএম

১৭ বছর পর দেশে ফিরে তারেক রহমানের কণ্ঠে ‘নিরাপদ বাংলাদেশ’, গণতন্ত্র ফেরানোর ডাক

“১৭ বছর পর, একটি নাম আবার বাংলাদেশের রাজনীতির কেন্দ্রে। লালসবুজে সাজানো বাস, জনতার ঢল, আর একটি কণ্ঠ—‘প্রিয় বাংলাদেশ’। তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন কেন শুধু রাজনীতি নয়, বরং কোটি মানুষের প্রত্যাশার প্রতিচ্ছবি।”

রাজধানীর পূর্বাচলে আজ যেন উৎসব আর ইতিহাস একসঙ্গে মিলেছে। লালসবুজ রঙে সাজানো বাসে করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গণসংবর্ধনাস্থলে পৌঁছান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের চোখেমুখে ছিল অপেক্ষা, উচ্ছ্বাস আর দীর্ঘদিনের আবেগের বহিঃপ্রকাশ।

বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে তারেক রহমান মঞ্চে ওঠেন। ৩টা ৫৭ মিনিটে বক্তব্য শুরু করে প্রথমেই বলেন, ‘প্রিয় বাংলাদেশ’। মঞ্চে থাকা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তিনি হাত নাড়িয়ে শুভেচ্ছা জানান নেতা-কর্মীদের। জনতার সাড়া আর করতালিতে পুরো পরিবেশ মুহূর্তেই আবেগে ভরে ওঠে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঞ্চে উঠে তারেক রহমানকে স্বাগত জানান। বক্তব্যে তারেক রহমান স্মরণ করেন ১৯৭১ ও ২০২৪ সালের সংগ্রাম। তিনি বলেন, যেভাবে মানুষ একসঙ্গে স্বাধীনতা রক্ষা করেছিল, আজও সবাই গণতন্ত্র ও কথা বলার অধিকার ফিরে পেতে ঐক্যবদ্ধ।

তারেক রহমান বলেন, এখন সময় এসেছে সবাই মিলে দেশ গড়ার। পাহাড়-সমতল, মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান—সবাইকে নিয়ে নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেন তিনি। এমন বাংলাদেশ, যেখানে নারী, পুরুষ কিংবা শিশু—ঘর থেকে বের হয়ে নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারবে।

তিনি আবেগভরে শহীদ ওসমান হাদির কথা স্মরণ করেন। বলেন, ১৯৭১ ও ২০২৪ সালের শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ করতে হলে প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়তে হবে। অর্থনৈতিক অধিকার, ন্যায়বিচার আর মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠাই হবে সেই বাংলাদেশের ভিত্তি।

তারেক রহমান বলেন, তরুণ প্রজন্মই আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়বে। শক্তিশালী অর্থনীতি ও গণতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর দেশ দাঁড় করানোর আহ্বান জানান। তিনি পরপর তিনবার উচ্চারণ করেন—“আমরা দেশের শান্তি চাই”—যা মুহূর্তেই জনতার কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়।

মার্টিন লুথার কিংয়ের ‘আই হ্যাভ অ্যা ড্রিম’ উদ্ধৃত করে তারেক রহমান বলেন, “আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান।” তাঁর ভাষায়, পরিকল্পনা আছে, তবে তা বাস্তবায়নে প্রয়োজন জনগণের সহযোগিতা। সবাই পাশে থাকলে বাংলাদেশকে নতুন পথে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি মা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান। এরপর বলেন, “সবাই মিলে করব কাজ, গড়বো মোদের বাংলাদেশ।” বক্তব্য শেষে তিনি উপস্থিত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

এরপর তারেক রহমান খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যাওয়ার খবরে সেখানে নেতা-কর্মীদের ঢল নামে। কেউ পতাকা হাতে, কেউ জার্সি পরে, কেউ সন্তান নিয়ে দাঁড়িয়ে। ১৭ বছর পর এক নজর তারেক রহমানকে দেখতেই মানুষের এই ভিড়।

বগুড়া, ভাটারা, বাড্ডা থেকে আসা সাধারণ মানুষ বলছেন, এই মুহূর্ত তাদের কাছে ঈদের মতো। নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ ও বিজিবি। রাজনৈতিক বাস্তবতায় আজকের এই দৃশ্য প্রমাণ করে—তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন কেবল ঘটনা নয়, এটি একটি বার্তা, একটি প্রত্যাশা।