আবাহনীকে হারিয়ে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান

স্বাধীনতা পরবর্তীকালে দেশি ফুটবলে যখন রমরমা অবস্থা ছিল, খেলাটির প্রতি যখন মানুষের গভীর টান ছিল, তখন দেশের যে কোনো স্টেডিয়ামে দুই ঐতিহ্যবাহী দল ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের লড়াই হলে গ্যালারীতে কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ হাজার দর্শক হাজির হতো। কিন্তু দেশি ফুটবলের প্রতি সেই মোহ এখন আর নেই। মঙ্গলবার কুমিল্লা কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে ফেডারেশন কাপ ফাইনালে চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী এই দুই দলের অত্যন্ত আক্রমণাত্মক ও রুদ্ধশ্বাস খেলাতেও দর্শক ছিল মাত্র কয়েক হাজার। মনমাতানো এই ফাইনালে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে ৪-৪ গোলে ড্র থাকলে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে জয়ী হয়ে ১৪ বছর পর শিরোপা উদ্ধার করেছে।     

১৯৮০ সালে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্টের অভিষেক চ্যাম্পিয়নও ছিল মোহামেডান। যৌথভাবে ব্রাদার্স ইউনিয়নের সঙ্গে জিতেছিল সাদা-কালো দলটি। এবারের ফাইনালে দলটির অধিনায়ক ও আফ্রিকান দেশ মালির খেলোয়াড় সোলেমান দিয়াবাতে গড়লেন এক বিশেষ ইতিহাস। এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে কোনো ফুটবলারের চার গোল করার কৃতিত্ব নেই। ৪৩ বছরের এই টুর্নামেন্টে বিরল রেকর্ড গড়লেন দিয়াবাতে।

দুই দল সবশেষ শিরোপা লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েছিল ২০১১ সালে কোটি টাকার সুপার কাপে। সেবার মোহমেডানকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল আবাহনী। এবার মধুর প্রতিশোধ নিল সাদা-কালোরা। ফেডারেশন কাপের রেকর্ড ১২ বারের চ্যাম্পিয়ন আবাহনীর মুকুট ধরে রাখা হলো না। এ প্রতিযোগিতায় দশম শিরোপার স্বাদ মোহামেডান পেয়েছিল সেই ২০০৯ সালে, হারানো সেই মুকুট এবার ফিরে পেল তারা দীর্ঘ ১৪ বছর পর। ২০১৪ সালে স্বাধীনতা কাপ জয়ের পর সব প্রতিযোগিতায় প্রথম ট্রফিও জিতল তারা। সবশেষ ২০১৯ সালে লিগ ম্যাচে আকাশি-নীলদের বিপক্ষে জিতেছিল মোহামেডান। সা¤প্রতিক সময়ে ধুঁকতে থাকা দলটির হাল মৌসুমের মাঝপথে ধরেছিলেন আলফাজ আহমেদ। সাবেক এই তারকা ফরোয়ার্ডের হাত ধরে হয়তো চেনা পথে ফেরার উপলক্ষ পেল দলটি।

এদিন ম্যাচের শুরুতে অবশ্য আধিপত্য বিস্তার করে আকাশী-হলুদের দলটি। প্রথমার্ধে তারা ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে ছিল। কিন্তু বিরতির পর মাত্র ৫ মিনিটের ব্যবধানে মোহামেডান দিয়াবাতের জোড়া গোলে দারুণভাবে খেলায় সমতায় ফেরে। ম্যাচের ১৫ মিনিটে ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের গোলে এগিয়ে যায় আবাহনী। খেলার ৪৩ মিনিটে কোস্টারিকার ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেসের গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ করে আবাহনী।  

দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমে গোল শোধ করতে মরিয়া হয়ে উঠে মোহামেডান। একের পর এক আক্রমণ শানাতে থাকে সাদা-কালোরা। দিয়াবাতের জোড়া গোলে সমতায় ফেরে মোহামেডান। এরপর ৬৫ মিনিটে নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার এমেকার গোলে আবারো (৩-২) ব্যবধানে এগিয়ে যায় আবাহনী। ৮৩ মিনিটে গোল করে সমতা আনেন এবং হ্যাটট্রিক পুর্ণ করেন মোহামেডানের দিয়াবাত (৩-৩)। এভাবেই নির্ধারিত সময়ে ড্র থাকলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।  

খেলার ১০৫ মিনিটে সোলেমান দিয়াবাতে গোলের জন্য এগিয়ে যান। আবাহনীর গোলরক্ষককে একা পেয়ে নিজের চতুর্থ গোলের জন্য মরিয়া ছিলেন তিনি। গোল ঠেকাতে পা বাড়িয়ে দেন গোলরক্ষক সোহেল। রেফরি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। পেনাল্টি শটে দিয়াবাতের গোলেই মোহামেডান এগিয়ে যায় (৪-৩ )। ১১৯ মিনিটে রহমতের গোলে ফের সমতায় ফিরে আবাহনী (৪-৪)। অতিরিক্ত সময়েও ড্র থাকলে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে।

ট্রাইবেকারে প্রথমে শটে গোল করে মোহামেডানকে এগিয়ে নেন অধিনায়ক দিয়াবেতে। বিপরীতে আবাহনী অধিনায়কের শট রুখে দেন  মোহামেডান গোলরক্ষক। শেষ পর্যন্ত ট্রাইবেকারে ৪ গোল করে এবং আবাহনীর দুই শট প্রতিহত করে জয় পায় মোহামেডান।  সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা


এনবিএস/ওডে/সি

news