২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে এসে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া প্রকাশ করেছে বছরের সেরা টেস্ট একাদশ। সাম্প্রতিক লাল বলের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে তৈরি এই একাদশে জায়গা পেয়েছেন বিশ্বের সেরা ক্রিকেটাররা, যেখানে কোনো দেশভিত্তিক পক্ষপাতের ছাপ নেই। সবচেয়ে বড় চমক—অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকে বাদ দিয়ে অধিনায়ক করা হয়েছে এক বিদেশি ক্রিকেটারকে।

টেস্ট ক্রিকেটের দিক থেকে ২০২৫ ছিল রোমাঞ্চে ঠাসা একটি বছর। পুরো বছরে অসাধারণ সব ব্যক্তিগত ও দলীয় পারফরম্যান্স দেখা গেছে, গড়া হয়েছে নতুন নতুন রেকর্ড। দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া—এই দুই দলই বছরজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল।

নিজেদের মাটিতে ভারতকে হোয়াইটওয়াশ করে ইতিহাস গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া ছিল প্রায় অপ্রতিরোধ্য—১১টি টেস্টে মাত্র ২টিতে হার, যার মধ্যে ছিল বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (ডব্লিউটিসি) ২০২৫ ফাইনাল। একই বছরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিজেদের মাঠে মাত্র ২৭ রানে অলআউট করে বিশ্বরেকর্ডও গড়ে অজিরা।

ইংল্যান্ড ও ভারত, সাম্প্রতিক সময়ের দুই টেস্ট পরাশক্তি, বছরের শুরুটা ভালো করলেও শেষটা ছিল হতাশার। ইংল্যান্ড অ্যাশেজ হারায়, আর ভারত নিজেদের ঘরে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়।

ওপেনিংয়ে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার যুগলবন্দি

ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সেরা একাদশে ওপেনিংয়ে জায়গা পেয়েছেন ভারতের কেএল রাহুল ও অস্ট্রেলিয়ার ট্রাভিস হেড। ২০২৪-২৫ বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি থেকে টেস্ট ক্যারিয়ার নতুন করে সাজান কেএল রাহুল। রোহিত শর্মার অবসরের পর নিয়মিত ওপেনার হয়ে ওঠেন তিনি।

ইংল্যান্ড সফরে ৫ ম্যাচে ৫৩২ রান করেন রাহুল—২টি সেঞ্চুরি ও ২টি হাফসেঞ্চুরিসহ। পুরো বছরে ১০ ম্যাচে তার রান ৮১৩, গড় ৪৫.১৬—টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা সময়গুলোর একটি।

অন্যদিকে ট্রাভিস হেড নিয়মিত ওপেনার না হলেও উসমান খাজার চোটে সুযোগ পেয়ে বাজিমাত করেন। অ্যাশেজে পার্থ ও অ্যাডিলেডে দুটি সেঞ্চুরি করেন তিনি। বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক হন হেড, তার ওপরে ছিলেন শুধু শুভমান গিল। অ্যাশেজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে তার ১২৩ রানের ইনিংস ছিল বছরের অন্যতম সেরা।

কামিন্স বাদ, অধিনায়ক হলেন ডব্লিউটিসি জয়ী বাভুমা

সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত এসেছে অধিনায়ক নির্বাচনে। প্যাট কামিন্সকে বাদ দিয়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক হিসেবে বেছে নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার টেম্বা বাভুমাকে। যদিও বাভুমা সব ম্যাচ খেলেননি, তবে যেসব ম্যাচে খেলেছেন, সেগুলোতে প্রোটিয়াদের জয় এনে দিয়েছেন।

হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি নিয়েও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬৬ রানের ইনিংস খেলেন বাভুমা—যেটি না হলে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম আইসিসি শিরোপা অধরাই থেকে যেত। ব্যাট হাতে ৪ ম্যাচে তার গড় ৫১.৬৬, সর্বোচ্চ ১০৬ রান।

পান্ত নয়, উইকেটকিপার হিসেবে কেয়ারি

উইকেটকিপার হিসেবে ঋষভ পান্ত নয়, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার পছন্দ অ্যালেক্স কেয়ারি। ২০২৫ সালে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার এই কিপার ব্যাট হাতে করেন ৭৬৭ রান, গড় ৪৭.৯৩, সঙ্গে ২টি টেস্ট সেঞ্চুরি।

উইকেটের পেছনেও ছিলেন দুর্দান্ত—১১ ম্যাচে ৪৪টি ক্যাচ ও ৫টি স্টাম্পিং। অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়ার অনেক গুরুত্বপূর্ণ আউটে বড় ভূমিকা রাখেন তিনি। ইংল্যান্ডে ভালো করলেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ধারাবাহিক হতে পারেননি পান্ত।

অলরাউন্ডারে স্টোকস, জাদেজা ১২তম খেলোয়াড়

ভারতের রবীন্দ্র জাদেজা ব্যাট হাতে দারুণ বছর কাটালেও বল হাতে ছিলেন তুলনামূলক কম কার্যকর। ইংল্যান্ডে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক ছিলেন তিনি। বছর শেষে তার রান ৭৬৪। তবে ২৫ উইকেট নেন গড়ে ৩৮.২ রান দিয়ে—২০১৪ সালের পর সবচেয়ে বাজে গড়। তাই তাকে রাখা হয়েছে ১২তম খেলোয়াড় হিসেবে।

একাদশের একমাত্র অলরাউন্ডার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস। কয়েক বছর পর টেস্টে নিয়মিত বোলিংয়ে ফিরে ৯ ম্যাচে ৩৩ উইকেট ও ৪৯৬ রান করেন তিনি। অনেকের চোখে ২০২৫ সালের সেরা অলরাউন্ডার স্টোকসই।

বোলিং আক্রমণে স্টার্ক-বুমরাহ

বোলিং বিভাগে চিরচেনা নাম মিচেল স্টার্ক ও জাসপ্রিত বুমরাহ। স্টার্ক ১১ ম্যাচে ৫৫ উইকেট নিয়ে ছিলেন শীর্ষে, কামিন্স ও হ্যাজলউডের অনুপস্থিতিতে অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়ার ভরসা হয়ে ওঠেন তিনি।

বুমরাহর ২০২৫ সাল ২০২৪-এর মতো না হলেও ইংল্যান্ড ও ঘরের মাঠে তার পারফরম্যান্স ছিল নজরকাড়া। নতুন দুই মুখ হিসেবে জায়গা পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার স্কট বোল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার সাইমন হার্মার। হার্মার উপমহাদেশে পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে ৪ ম্যাচে নেন ৩০ উইকেট। আর হ্যাজলউড না থাকায় বোল্যান্ড হয়ে ওঠেন অজিদের বড় শক্তি।

ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ২০২৫ সালের সেরা টেস্ট একাদশ

কেএল রাহুল, ট্রাভিস হেড, জো রুট, শুভমান গিল, টেম্বা বাভুমা (অধিনায়ক), অ্যালেক্স কেয়ারি (উইকেটকিপার), বেন স্টোকস, মিচেল স্টার্ক, জাসপ্রিত বুমরাহ, স্কট বোল্যান্ড, সাইমন হার্মার
১২তম খেলোয়াড়: রবীন্দ্র জাদেজা

 

news