নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনা

সিনেমার গল্পের প্লটও বুঝি এতো বেশি রোমাঞ্চকর হয়না। আজকের রাতটা হয়তো আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল উভয় দলের সমর্থকদের মনে আলাদা জায়গা করে নেবে সেটি নিশ্চিত। ব্রাজিলের অনাকাঙ্খিত হার এরপরই আর্জেন্টিনার নাটকীয় বিজয়। কি ছিলোনা আজকের রাতে?  টাইব্রেকারে নেদারল্যান্ডসকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে কাতার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। দুই পেনাল্টি ঠেকিয়ে ম্যাচের নায়ক আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।

কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে নির্ধারিত সময় ও অতিরিক্ত সময়ের খেলা শেষেও ম্যাচের মীমাংসা না হওয়ায় টাইব্রেকার অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম শট নিতে আসেন ফন ডাইক। বাম প্রান্ত দিয়ে নেয়া তার শট ঝাপিয়ে পড়ে ফিরিয়ে দেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক। আর্জেন্টিনার পক্ষে প্রথম শট নিয়ে গোল করেন মেসি। ডাচদের দ্বিতীয় শটও ফিরিয়ে দেন মার্টিনেজ। পরের শটে গোলও করে তার দল। টাইব্রেকারের স্কোর লাইন তখন ২-০।

নেদারল্যান্ডস ও আর্জেন্টিনা, দুদলই পরের শটে গোল করে। চতুর্থ শটটিও সফল হয় ডাচদের। আর্জেন্টিনা পরের শট মিস করে। ফলে আশা বেঁচে থাকে ৩-২ গোলে পিছিয়ে থাকা ডাচদের। কিন্তু লতারো মার্টিনেজ পরের শটে গোল করলে সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয় মেসিদের।

এর আগে ম্যাচের অষ্টম মিনিটে গোল হজম করতে পারত নেদারল্যান্ডস। সতীর্থের কাছ থেকে বল পেয়ে ডাচ গোলরক্ষক পাস দিয়েছিলেন হুরিয়েন টিম্বারকে। কিন্তু বক্সের ভেতর থাকা হুলিয়ান আলভারেজ একটুর জন্য বলের নাগাল পাননি। সে যাত্রায় বেঁচে যায় লুইস ফন গালের শিষ্যরা।১৫ মিনিট পর আর্জেন্টিনার কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে আক্রমণে উঠেছিল নেদারল্যান্ডস। গোলের সুযোগও তৈরি করেছিল তারা। কিন্তু সীমানার ঠিক উপর থেকে মেম্ফিস ডিপাইয়ের পাসে বলে হেড নিতে পারেননি ডেলি ব্লাইন্ড। পর মুহূর্তে আবার আক্রমণ শানালে দৌড়ে গিয়ে বল তালুবন্দি করেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।

২১ মিনিটে নেদারল্যান্ডসের দুই ডিফেন্ডারকে বিট করে জাল বরাবর শট নেন লিওনেল মেসি। কিন্তু তার শট চলে যায় অনেক উপর দিয়ে। নেদারল্যান্ডস বড় সুযোগ নষ্ট করে এর তিন মিনিট পর। এ সময় লম্বা পাসে বল পান ডিপাই। আলতো ছোয়ায় তিনি পাস দেন বারঘুইসকে। বারঘুইসের নেয়া শট বারের একটু বাইরে দিয়ে গেলে কপাল চাপড়াতে হয় ডাচদের।

৩৬ মিনিটে গোলটি করে আর্জেন্টিনা। ডি বক্সের কাছাকাছি এসে মেসি আড়াআড়ি পাস দেন মলিনাকে। এক ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে বল জালে জড়ান আর্জেন্টাইন ফুটবলার। সঙ্গে সঙ্গে উদযাপানে মাতে পুরো লুসাইল স্টেডিয়ামের আর্জেন্টাইন সমর্থকরা, সম্ভবত পুরো বিশ্বের সমর্থকরাও।

৬২ মিনিটে বিপদজনক জায়গায় ফ্রি-কিক পায় আর্জেন্টিনা। ফলে ভয় আরও বাড়ছিল ডাচ শিবিরে, কেননা বক্সের কয়েক হাত দূরের ফ্রি-কিক থেকে যে মেসি অহরহ গোল করে থাকেন। এদিনও একটুর জন্য গোল পাওয়া হয়নি তার। বুলেট গতির শট চলে যায় অনেকটা পোস্ট ঘেঁষে। মেসি একটা আফসোসের হাসি দেন নিজেদের অর্ধে যেতে যেতে।

৭১ মিনিটে ডি বক্সের লাইন ঘেঁষে মার্কাস আকুনাকে ফাউল করেন ডেনজেল ডামফ্রিস। সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজান ম্যাচ রেফারি। সেই পেনাল্টি থেকে দলকে ২-০ গোলের লিড এনে দেন মেসি। এর মাধ্যমে বিশ্বকাপে ১০ গোল হলো মেসির। তার সমান গোল আছে আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি তারকা বাতিস্তুতার।

৮৩ মিনিটে এক গোল শোধ করে ম্যাচে ফিরে নেদারল্যান্ডস। তাদের সেই মোমেন্টাম এনে দেন বদলি হিসেবে নামা ওউট উইঘর্স্ট। একটু পর আরও গোল পেতে পারত নেদারল্যান্ডস। কিন্তু তাদের দুর্দান্ত একটি শট যায় পোস্টের খানিকটা বাইরে দিয়ে। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচের যোগ করা সময়ে আর্জেন্টিনার ডি বক্সের কাছাকাছি ফ্রি-কিক পায় নেদারল্যান্ডস। সেই শট নেন টি কোপমেইনার্স। তার শট থেকে বক্সের ভেতর বল পান উইঘর্স্ট। সেখান থেকে নেয়া শটে মার্টিনেজকে পরাস্ত করেন তিনি।

এনবিএস/ওডে/সি

news