বাগেরহাটের উপকূলীয় এলাকার লবণাক্ত পতিত জমিতে এবার কোটি কোটি টাকার তরমুজ চাষে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের ৯ উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে তরমুজের সবুজ ক্ষেত এখন দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। মঘিয়া, আন্ধারমানিক, চরসোনাকুর এলাকার কৃষকরা এবার রেকর্ড পরিমাণ তরমুজ উৎপাদন করেছেন, যা থেকে প্রায় সাড়ে ৩৬ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রির আশা করছেন তারা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বলেশ্বর নদীর চরাঞ্চলের তরমুজ ক্ষেতগুলো এখন কর্মব্যস্ততায় মুখর। কৃষক ও শ্রমিকরা ক্ষেত থেকে তরমুজ তোলা, বাছাই করা এবং বাজারজাত করার কাজে দিনরাত এক করে দিয়েছেন। প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক, ট্রলি ও কার্গোতে করে ঢাকা, খুলনা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে এই মিষ্টি তরমুজ। ক্ষেত থেকে তরমুজ তোলা, বাছাই ও প্যাকিংয়ের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় ৪০০ শ্রমিক। স্থানীয় কৃষক দেবদাস মজুমদার বলেন, "এবার আমার ৩ বিঘা জমি থেকে ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। গতবারের চেয়ে এবার দামও ভালো পেয়েছি।"
কচুয়া উপজেলায় এবার ৮০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় কম হলেও ফলন হয়েছে দ্বিগুণ। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ১০০ হেক্টর জমিতে সাড়ে ৫ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হলেও এবার মাত্র ৮০ হেক্টরে ইতিমধ্যেই ২ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হয়েছে এবং আরও সাড়ে ৪ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রির আশা করছেন কৃষকরা।
তরমুজ চাষের এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে কৃষি বিভাগের অবদান। কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ, সার, বালাইনাশক ও নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে মাঠে গিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। কৃষকরা শ্যালো মেশিন ও ঢেঁকি কলের মাধ্যমে নিয়মিত সেচ দেওয়ার পাশাপাশি বলেশ্বর নদীর মিষ্টি পানি ব্যবহার করেছেন, যা তরমুজের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করেছে।
তরমুজ চাষী সুদেব মিস্ত্রি বলেন, "এবার আমার ৩ বিঘা জমি থেকে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। কৃষি অফিস থেকে পাওয়া প্রশিক্ষণ ও সহায়তা না পেলে এত সাফল্য সম্ভব হতো না।" পাইকারি ব্যবসায়ী নজরুল শেখ জানান, তিনি ইতিমধ্যেই ১ কোটি টাকার তরমুজ কিনেছেন এবং সারা দেশে বিক্রি করছেন।
কচুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকাশ বৈরাগী জানান, এবার বিঘাপ্রতি কৃষকরা ৬০-৭০ হাজার টাকা বেশি আয় করছেন। এক বিঘা জমিতে খরচ হয় ৫০-৬০ হাজার টাকা, আর বিক্রি হয় ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী বছর তরমুজ চাষের এলাকা আরও বাড়বে।
তবে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। মোল্লাহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনিমেষ বালা জানান, সরকারি উন্নয়ন কাজের কারণে এবার কিছু এলাকায় তরমুজ চাষের জমি কমেছে। তবুও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। বাগেরহাটের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক (কৃষি) মো. আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, "জেলায় বর্তমানে ১৯০ জন চাষি ৯৯ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করছেন। আমরা কৃষকদের উচ্চমূল্যের ফসল চাষে উৎসাহিত করছি।"
এই সাফল্য শুধু অর্থনৈতিকই নয়, সামাজিকভাবেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তরমুজ ক্ষেত দেখতে এখন প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী আসেন, যাদের তরমুজ দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। স্থানীয় কৃষকরা এখন আগামী মৌসুমের জন্য আরও বেশি জমিতে তরমুজ চাষের পরিকল্পনা করছেন। এই সাফল্য দেখে আশপাশের এলাকার কৃষকরাও তরমুজ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন, যা উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকার কৃষি অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।
#তরমুজ_চাষ #বাগেরহাট #লবণাক্ত_জমি #কৃষি_সাফল্য #সুন্দরবন
 
                                
                                 
	 
                                 
                     
 
 
 
                                                                                    
 
                                                                                                                          
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                            