বসন্তের শেষে বৈশাখের হালকা বাতাসে দোল খাচ্ছে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত। সবুজের সমারোহে ভরা মাঠজুড়ে বোরো ধানের শীষে শীষে লুকিয়ে আছে কৃষকের বুকভরা স্বপ্ন। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের উপকূলবর্তী এই অঞ্চল যেন এখন সোনালি ফসলে ভরা এক স্বপ্নীল মাঠ।
মোরেলগঞ্জের ভাইজোড়া, কাঠালতলা, বিশারীঘাটা, খাউলিয়া, বনগ্রাম, বলইবুনিয়া, হোগলাপাশা, চিংড়াখালী ও হোগলাবুনিয়া গ্রামের শতাধিক কৃষক এবার বোরো ধানের চাষে রেকর্ড সাফল্য পেয়েছেন। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের ৯ হাজার হেক্টর জমিতে এবার বোরো ধানের চাষ হয়েছে। মাঠে মাঠে এখন ধানের শীষে দুধ-দানা গঠন শুরু হয়েছে। কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, "গতবারের চেয়ে এবার ধানগাছ অনেক বেশি সবল। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে সার, সেচ ও কীটনাশক সঠিক সময়ে দিয়েছি। যদি বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ না আসে, তাহলে এবার বাম্পার ফলন হবে।"
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার কৃষকরা উচ্চফলনশীল (উফশী) জাতের ধান চাষ করেছেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগের নিয়মিত পরামর্শ, সার ও বীজ সহায়তা এবং কৃষকদের নিরলস পরিশ্রমে ধানের ক্ষেতগুলো এখন স্বপ্নীল সবুজে ভরা। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, "আমরা কৃষকদের আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি শেখানোর পাশাপাশি পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করেছি। এতে করে পাখিরা ক্ষেতের পোকামাকড় খেয়ে ফেলে, কীটনাশকের ব্যবহার কমে যায়।"
মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের কৃষক আব্দুর রহিম হাওলাদার তার ২ একর জমিতে ব্রি ধান-২৮ ও ব্রি ধান-২৯ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, "কৃষি অফিস থেকে ভালো মানের বীজ পেয়েছি। নিয়মিত সেচ দিয়েছি, আগাছা পরিষ্কার করেছি। এখন শুধু অপেক্ষা ধান পাকার।" তার মতো শতাধিক কৃষক প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধানক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত। কেউ সেচ দিচ্ছেন, কেউ বা পার্চিং তৈরি করছেন, আবার কেউ ধানগাছের গোড়ায় সার দিচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, "এবার আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। সময়মতো বীজতলা তৈরি, চারা রোপণ, সেচ ও সার প্রয়োগ করা হয়েছে। ধানগাছে তেমন কোনো রোগবালাই দেখা যায়নি। আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে ধান কাটা শুরু হবে।" তিনি আরও জানান, গত বছরের তুলনায় এবার হেক্টরপ্রতি ফলন ১০-১৫% বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মাঠে মাঠে এখন ধানের সবুজ শীষ দেখে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। কৃষাণী রাবেয়া বেগম বলেন, "ধান যখন শীষ বের করে, তখন আমাদের বুকটা খুশিতে ভরে যায়। ছেলেমেয়েদের জন্য নতুন জামা-কাপড়, বাড়তি সংসার খরচ, সবই তো এই ধান থেকেই হবে।"
বাগেরহাট রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির বলেন, "সুন্দরবন উপকূলের এই অঞ্চলের কৃষকরা প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে ফসল ফলান। তাদের এই পরিশ্রমের ফল এবার সোনালি ধানের শীষে শীষে দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় সীড কোম্পানিগুলো যদি গরিব কৃষকদের আরও বেশি সহায়তা করে, তাহলে ফলন আরও বাড়ানো সম্ভব।"
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর কৃষকের স্বপ্নে ভরা মোরেলগঞ্জের মাঠ এখন অপেক্ষা করছে শুধু ধান পাকার। বৈশাখের রোদে যখন ধানের শীষ সোনালি রং ধারণ করবে, তখন মাঠের পর মাঠ যেন সোনার খনি হয়ে উঠবে। কৃষকের খালি গোলাজুরি ভরে উঠবে সোনালি ধানে। আর এই সোনালি ধানই হবে কৃষক পরিবারের মুখে হাসি ফোটার মূল কারণ।
#সুন্দরবন_কৃষি #বোরো_ধান #মোরেলগঞ্জ #কৃষকের_স্বপ্ন #সোনালি_ফসল
 
                                
                                 
	 
                                 
                     
 
 
 
                                                                                    
 
                                                                                                                          
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                            