প্রেমের টানে গত ১৯ জুন ২২ তারিখে ঘর ছাড়েন ময়মনসিংহের কোতোয়ালী থানাধীন চর ঈশ্বরদিয়া পূর্বপাড়ার মোঃ আব্দুর রশিদের ছেলে সিরাজুল ইসলাম (২০) ও তার প্রেমিকা একই গ্রামের খোকন মিয়া ওরফে কাজলের মেয়ে খুকি আক্তার (২০)।

খুকি আক্তারকে ফিরে পাওয়ার জন্য তার বাবা খোকন মিয়া ওরফে কাজল ও মা নাসিমা আক্তার কনা সিরাজুল ইসলামের বাবা আব্দুর রশিদ ও মা লাইলী বেগমকে চাপ দিতে থাকে। অন্যথায় তাদের দেখে নেবে বলে হুমকি প্রদান করে। ১০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও মেয়ে খুকি আক্তারকে ফিরে না পেয়ে তার বাবা খোকন মিয়া ওরফে কাজল ও মা নাসিমা আক্তার কনা অন্যান্য আসামীদের নিয়ে গত ২৮ জুন ২২ তারিখে সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে ছেলের বাবা আব্দুর রশিদের বাড়ীতে প্রবেশ করে গালিগালাজ করতে থাকে।  আব্দুর রশিদের অনুপস্থিতিতে সকল আসামীরা তার স্ত্রী লাইলী আক্তারের মুখ চেপে ধরে হাত, পা বিদ্যুতের কালো তার দিয়ে বেধে তার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের প্রায় ৬০ শতাংশ আগুনে পুড়ে যায়। ভিকটিম লাইলী আক্তারকে দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিম লাইলী আক্তারকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হতে ঢাকায় রেফার্ড করেন। ভিকটিম লাইলী আক্তারকে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্রাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এ ভর্তি করা হলে সেখানে ভিকটিম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। উক্ত ঘটনায় লাইলী আক্তারের স্বামী আব্দুর রশীদ বাদী হয়ে কোতোয়ালী মডেল থানার মামলা নং-৯৯, তাং-২৮/০৬/২২ খ্রিঃ, ধারা-নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সং/০৩) এর ৪(১) দায়ের করেন। চাঞ্চল্যকর ও নৃশংস এই হত্যাকান্ডের খবরটি বিভিন্ন ইলেকট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচারিত হয়।

বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত চাঞ্চল্যকর ও নৃশংসভাবে পুড়ে এই হত্যাকান্ডের সংবাদটি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে অ্যাডিশনাল আইজিপি, পিবিআই বনজ কুমার মজুমদারের তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাসের সার্বিক সহযোগীতায় পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলা আসামীদের গ্রেফতারের নিমিত্তে মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে। ইতোমধ্যে থানা পুলিশ হত্যাকান্ডের সহযোগী এজাহারনামীয় ৪নং আসামী জাহাঙ্গীর ও ৭নং আসামী আছমাকে গ্রেফতার করলেও মামলার মূল এজাহারনামীয় ১নং আসামী খোকন মিয়া ওরফে কাজল ও ২নং আসামী নাসিমা আক্তার কনা সুচতুরভাবে নিজেদের আত্মগোপন করে রাখে।

ছায়া তদন্তের এক পর্যায়ে পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলার চৌকস টিম গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সের এলআইসি টিমের সহযোগীতায় ০৫ জুলাই ২২ তারিখ ভোর আনুমানিক ৫টার দিকে নারায়নগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানা এলাকা থেকে নৃশংস এ আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলার আত্মগোপনে থাকা মূল ১নং আসামী খোকন মিয়া ওরফে কাজল ও ২নং আসামী নাসিমা আক্তার কনাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী খোকন মিয়া ওরফে কাজল ও নাসিমা আক্তার কনা ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। অদ্য গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়কে থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হবে।

এ বিষয়ে আজ দুপুর ১২টায় পিবিআই হেডকোর্য়াটার্স, ঢাকায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি মাধ্যমে ঘটনাটি সংবাদিকদের মাঝে তুলে ধরেন পিবিআইয়ের অতিরিক্ত ডিআইজি (পূর্বাঞ্চল, ঢাকা) মোঃ সায়েদুর রহমান।  এ সময় তিনি বলেন, সামাজিক অবক্ষয়ের ফলে সন্তানের প্রেমের বলি হতে হয়েছে মাকে। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে দাহ্য পদার্থ দ্বারা পুড়িয়ে হত্যা করা হয় লাইলী বেগমকে। 

তিনি ফেনীর নুসরত হত্যার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, নুসরাতকেও দাহ্য পদার্থ দ্বারা নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। একইভাবে এই মামলার ভিকটিমকে দাহ্য পদার্থ দ্বারা পুড়িয়ে হত্যা করা হয়, যা সমাজের জন্য ভীতিকর।

news